প্রভাতী ডেস্ক: ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার ঢাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য পারভীন আক্তারকে যৌন হয়রানী, প্রকল্পের টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান মেজবাহ্ উদ্দিন মন্ডল ও সচিব গৌতম কুমার সেনের বিরুদ্ধে। এছাড়াও পরিষদের ভেতরে রয়েছে চেয়ারম্যান-সচিবের শয়ন কক্ষ, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন মানুষের। তারাকান্দা উপজেলার ৬ নম্বর ঢাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসন ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং গীর্দ্দাপাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী
পারভীন আক্তার বলেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মেজবাহ্ উদ্দিন মন্ডল ও সচিব গৌতম সেনের রোষানলে পড়েন। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করার পূর্বেই চাওয়া হয় চেকে সই। তা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই যৌন হয়রানীসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় তাকে।
এ ঘটনায় আদালতে মামলা এবং বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও কোন ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না তিনি। স্থানীয় আবুল হোসেন মন্ডল এবং মিরাজ উদ্দিন জানান, এলজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসূচিসহ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চেয়ারম্যান এবং সচিব মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেরা বাড়ি গাড়ি করলেও উন্নয়ন নেই রাস্তা-ঘাটের। রাস্তা দেখিয়ে প্রকল্প নেয়া হলেও সেখানে কোন কাজ করা হয়না। যে আশায় চেয়ারম্যানকে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত করে ছিলাম তার কিছুই পূর্ণ হয়নি। আমরা চাই এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসুক। পরিষদের ভিতরে চেয়ারম্যান-সচিবের শয়ন কক্ষটিও অপসারন চাই।
সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল আলম লিটন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে চাকরী করে বাড়ি গাড়ি করা খুবই কঠিন। ঢাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গৌতম কুমার সেন তারাকান্দা উপজেলা সদরে জায়গা কিনে একতলা বিল্ডিং করেছে যার আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা। অবৈধ পন্থা ছাড়া এতো কিছু করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। সঠিক তদন্ত করলেই গৌতম সেনের অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসবে।
মোশারফ হোসেন ভূইয়া বলেন, ঢাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গৌতম কুমার সেন আমাদের কাছ থেকেই ২২শতাংশ জায়গা ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। তার কাছে প্রতি শতাংশ জায়গা আড়াই লাখ টাকা ধরে বিক্রি করা হয়েছে। তার স্ত্রী প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরী করে। তবে তাদের বেতন যে পরিমাণ তা দিয়ে জায়গা কিনে বাড়ি করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। সরকার যেভাবে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে তা তৃণমূল পর্যায়েও দরকার, তাহলে দুর্নীতি বন্ধ হবে। সাধারন মানুষ তাদের প্রাপ্যটুকু পাবে।
ঢাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গৌতম কুমার সেন বলেন, আগে থেকেই আমাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সরকারী চাকরী করছি। বেতনের টাকায় জায়গা কিনে বাড়ি করেছি। এতে অনিয়মের কিছু নেই। পারভিন আক্তার আমার বিরুদ্ধে আদালতে যৌন হয়রানীর মামলা করেছে, সেটি সত্য নয়। আমি প্রতিহিংসার স্বীকার।
অভিযোগের ব্যাপারে ঢাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ্ উদ্দিন মন্ডল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়েছি আমি। প্রতিপক্ষ নির্বাচনকে সামনে রেখে পারভীনকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হলেও পরে পারভীনকে পরিষদে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে পরিষদে না আসলে আমার করার কি আছে?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী বলেন, নারী ইউপি সদস্য পারভীন আক্তার তাকে যৌন হয়রানী, মারধরসহ পরিষদে নানা অনিয়মের বিষয়ে আমাকে মৌখিক ভাবে অবহিত করেছে। আমি কয়েকদিনের মধ্যে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। তবে, ইউনিয়ন পরিষদে শয়ন কক্ষ আছে কিনা খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।