প্রভাতী ডেস্ক: রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকে বিএনপি ছাড়লেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। মঙ্গলবার(৫নভেম্বর) বিএনপি মহাসচিব বরাবর লোক মারফত পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়েছেন তিনি। পদত্যাগপত্রে ‘নেহাত ব্যক্তিগত’ কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গত রাতে মোরশেদ খান বলেন, ব্যক্তিগত কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে তার উপলব্ধি হয়েছে, সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
অবশ্য এ জ্যেষ্ঠ নেতার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, ত্যাগী ও জনপ্রিয় এ নেতাকে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রামের রাজনীতির এখনকার ‘হর্তাকর্তা’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতার কারণে তিনি মনোনয়ন পাননি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও মোরশেদ খানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারেননি। এ যন্ত্রণা তাকে অনেক ভুগিয়েছে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তার অনুসারীদেরও কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় তার অনুসারীদের পদ-পদবি নেই, থাকলেও যোগ্যতার তুলনায় তা কিছুই নয়। এসব ক্ষোভ থেকে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
অনেকেই মনে করেন, তারেক রহমানের প্রতি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, এর মাধ্যমে তা প্রকাশ পেল। এতদিন জ্যেষ্ঠ নেতাদের নানা ক্ষোভের কথা শোনা গেলেও এই প্রথম কেউ পদত্যাগ করলেন।
পদত্যাগপত্রে মোরশেদ খান বলেন, মানুষের জীবনের কোনো না কোনো সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সে ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি। তিনি বলেন, রাজনীতির অঙ্গনে আমার পদচারণা দীর্ঘকালের। কিন্তু দেশের রাজনীতি এবং দলের অগ্রগতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার মতো সঙ্গতি নেই। তাই ব্যক্তিগত কারণ হেতু আমার উপলব্ধি- সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার এখনই সময়। বহুবিধ বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি অবিলম্বে আজ থেকে বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহারসহ বর্তমানে ‘অলঙ্কৃত’ ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
চিঠিতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পর্কের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় অসংখ্য নেতাকর্মীর সান্নিধ্য পেয়েছি এবং উপভোগ করেছি। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত এবং অনেকেই বর্তমানে দলের হাল ধরে আছেন। প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার শান্তি যেমন কামনা করি, তেমনি আপনিসহ বর্তমান সব নেতা-কর্মীদেরও আমি শোভাকাংঙ্কী। অতীত ও বর্তমান সব কর্মীর নিরবচ্ছিন্ন সান্নিধ্য, সখ্যতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সাহায্য-সহযোগিতার কথা আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন এবং দলের কর্মী হিসেবে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে বিএনপি আমাকে বিরল সম্মানে ভূষিত করেছে।
উল্লেখ্য, মোরশেদ খান ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল, এর পর জুন ’১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ -১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ছিলেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এই নেতা।