শনিবার, ১০ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১০ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১০ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই জিলকদ ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে লাখ টাকার চুক্তিতে ধর্ষণ মামলা করতে স্বেচ্ছায় ধর্ষিত হলো তরুণী !

প্রভাতী ডেস্ক: প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ১লক্ষ টাকায় পতিতার সাথে চুক্তি করে ধর্ষণের ঘটনাটি সাজানো হয়েছে একেবারে নিখুঁতভাবে। এর পরেও সিএমপির কোতোয়ালী থানার চৌকস তদন্ত টীমের কাছে নিমিষেই উদঘাটন হলো আসল রহস্য।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উক্ত ধর্ষণ মামলার ঘটনার বিবরণ।

উক্ত পোস্টটি গ্রাহকদের জন্য হুবহু দেওয়া হল-

“শুক্রবার রাত প্রায় ১১টা। ক্লান্ত শরীরও মোবাইলের বিরামহীন রিংটোনের অব্যাহত চাপে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখনই হঠাৎ এক তরুণী এসে হাজির। এলোমেলো চুল আর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বর তার ওপর বয়ে যাওয়া ঝড়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তাই ব্যাগপ্যাক নিচে রেখে বসলাম চেয়ারটাতে। এলোমেলো ভাষায় মেয়েটি যা বলল তার সারাংশ হচ্ছে, চাকরি দেওয়ার নাম করে তাকে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম আনে কবির হোসেন ইউপি সদস্য। সঙ্গে ছিলেন ইউপি মেম্বারের ভাতিজা শাহাজাহান। কুমিল্লা থেকে এনে মেয়েটিকে লালদীঘি এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে রাখেন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী কবির। সেই হোটেল কক্ষে মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে চাচা-ভাতিজা! চাকরির আশায় চট্টগ্রাম এসে সর্বস্ব খুইয়ে মেয়েটি কাঁদছে এখন বিচারের আশায়। মেয়েটিকে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে তখনই দায়িত্ব প্রদান করলাম পরিদর্শক কামরুজ্জামানকে’।

দায়িত্বপ্রাপ্তির পরপরই আমাদের তদন্ত দল প্রথমেই যায় ঘটনাস্থল সেই আবাসিক হোটেলে। সেখানকার রেজিস্ট্রার চেক করে মেয়েটির হোটেলে থাকার প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হয় টিম কোতোয়ালি।

শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য যাচাই করা হয় সিসিটিভি ফুটেজ। কিন্তু ফুটেজ দেখেই একটু ধাক্কা খাই আমরা। ফুটেজে কক্ষে মেয়ে ও দুই ব্যক্তি দেখা গেলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বয়সের সঙ্গে মেলে না। সারা দিনের ফুটেজ চেক করলেও সেখানে বয়স্ক কারো আসা যাওয়া দেখা যায়নি। এরপর মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর জন্য মেয়েটিকে ডাকা হলে মেয়েটি আসে। সঙ্গে আসে এক ছেলেও। মেয়ের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ছেলেটির সঙ্গে গল্পের ছলে কথা বললে পূর্বের ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে ব্যাপক বৈসাদৃশ্য ধরা পড়ে। এতেই ঘটনা ঘিরে সন্দেহ জাগে আমাদের। এরপর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সবকিছু স্বীকার করে ছেলেটি। ফাঁস করে অন্যকে ফাঁসানোর ভয়াবহ এক চক্রান্ত’।

‘কুমিল্লার বুড়িচংয়ে নিমসার বাজার নিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার কবির হোসেন ও তার ভাতিজা শাহ আলমের সঙ্গে বিরোধ আছে স্থানীয় বাসিন্দা মামুনের। কবির ও শাহ আলমকে ‘শিক্ষা’ দিতেই চট্টগ্রামের তরুণীকে ভাড়া করে মামুন। চুক্তি হয় এক লাখ টাকার। ধর্ষণের মামলা যেন বিশ্বাসযোগ্য হয় তাই ঠিক করে আবাসিক হোটেল। ঝুঁকি এড়াতে ভিন্ন দুজনের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ‘ধর্ষিত’ও হয়! তবে তাদের সব কুট কৌশলই শেষ পর্যন্ত উন্মোচিত হয়েছে। উন্মোচিত হয়েছে পুরো ঘটনা। গ্রেপ্তার হয়েছে তিন জন। মামুন পলাতক থাকলেও গ্রেপ্তার হবে যেকোনো সময়ই’।

‘আমি মেয়েটির কথা শুনেছি। কান্না দেখেছি। দেখে আমিও কেঁদেছি। কিন্তু আবেগে ভেসে যায়নি। ভেসে যায়নি কামরুজ্জামান কিংবা টিম কোতোয়ালির কেউই। আড়াল থেকে সত্য বের করে এনেছে। সম্ভাব্য ভয়ংকর পরিণতি থেকে বাঁচিয়েছে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক জনপ্রতিনিধিকে। ফাঁস করেছে ভয়ংকর প্রতারক চক্রের ভয়ংকর প্রতারণা। মেয়েটিকে কথা দিয়েছিলাম ন্যায়বিচার করার। কথা রেখেছি’!

‘অফুরান ভালোবাসা আমার টিম কোতোয়ালির জন্য’।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print