মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলহজ ১৪৪৬ হিজরি

সংবাদ প্রকাশ না করতে নগদে ঘুষ প্রদানের চেষ্টা

ইসলামি ব্যাংকের পিওন ফারুকের অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা, নীরব কর্তৃপক্ষ

অবৈধ টাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ী

চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের পিয়ন ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অফিসের ভেতরে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছে। তার উক্ত কর্মকাণ্ডের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখার পিওন ওমর ফারুক ব্যাংকের ভেতরে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি ব্যাংকের লেনদেন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাজে লাগিয়ে একাধিক হুন্ডি ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন।

রবিবার (২৩ মার্চ) আনুমানিক বেলা ৩টার দিকে সরেজমিনে গ্রাহক সেজে ফারুকের সাথে দেখা করে ১৫০ (দুবাই) দেরহাম এক্সচেঞ্জের কথা বললে তিনি ৩২ টাকা দামে উক্ত মুদ্রা ক্রয় করেন। সর্বোচ্চ কত টাকা এক্সচেঞ্জ করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫০ হাজার ডলার হলেও সমস্যা নেই। ব্যাংকে তো টাকার অভাব থাকে না। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন গরীব মানুষ ভুল করেছেন এবারের মতো মাফ করতে। এসময় ব্যাংকের সিকিউরিটি এসে প্রতিবেদকের হাতে কিছু নগদ টাকা দেওয়ার চেষ্টা করে বলেন সেখানে ১০ হাজার আছে, রাতে অফিসে এসে আরো টাকা দিবে। টাকা না নেওয়ায় ফারুক এসে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন হাতে ধরিয়ে দিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানান। ফোন নিয়ে কথা বললে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে ইউসুফ পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি আগ্রাবাদস্থ ন্যাশনাল মানি এক্সচেঞ্জের মালিক। ফারুক তার হয়ে কাজ করেন, তাই এই বিষয়টি না বাড়িয়ে তার অফিসে গিয়ে মিটিয়ে ফেলার অনুরোধ করেন।

পরদিন ফারুক ফোন করে বলেন বিষয়টি প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি সাহেব ডিল করতেছেন। এটা নিয়ে এম.এন গ্রুপের চেয়ারম্যান লবিং করতেছেন। তাই উনার সাথে যোগাযোগ করতে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি বলেন অপরাধ করলে সংবাদ প্রকাশ করবেন। যেই লবিং করুক না কেন সংবাদ প্রকাশে কারো হস্তক্ষেপ কখনো কাম্য নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র শাখার এক কর্মকর্তা জানান, “ওমর ফারুক অফিসের বাইরের কিছু লোকের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করেন এবং আইনের তোয়াক্কা না করে সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করেন। যাহা ব্যাংকের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আইনগতভাবে গুরুতর অপরাধ।

বিশ্বস্থ মাধ্যমে জানা যায়, ব্যাংকের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে ফারুকের সখ্যতা রয়েছে। তাদের মারফত তিনি এই অবৈধ কাজকে বৈধ করেছেন এবং অবৈধ উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ উক্ত কর্মকর্তাদের পকেটে যায়। সেই সুবাদে তিনি ব্যাংকের নগদ অর্থ ব্যবহারেরও সুযোগ পান।

এছাড়া ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে তার রয়েছে একটি দালাল চক্র। হাসপাতালে আগত রোগীর স্বজনদের নগদ টাকা না থাকলেও অনেক সময় বৈদেশিক মুদ্রা থাকে। তারা দালালের মাধ্যমে ফারুকের কাছে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করে। তাদেরকে মুদ্রাপ্রতি ৩-৪টাকা কম দেওয়া হয়। অসহায় মানুষের প্রতি এমন আচরণ শুধু অপরাধ নয় এটা জঘন্য অপরাধ।

এ বিষয়ে ইসলামি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, “আমি সবেমাত্র আজকে যোগদান করেছি। এই অভিযোগটি মাত্র আপনার(প্রতিবেদক) মারফত জানতে পেরেছি। তবে যদি কোনো কর্মচারী এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বৈধ চ্যানেলের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সরকারের রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হতে পারে। তাই বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

★পরবর্তীতে ফারুকের অবৈধ টাকায় অর্জিত নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের বিবরণ নিয়ে প্রকাশিত হবে বিশেষ প্রতিবেদন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print