রবিবার, ১৬ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৬ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৬ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রমজান ১৪৪৬ হিজরি

রেজিষ্ট্রারে দেখা যায় কিছু কর্মকর্তা সিলগালা করে সেফ ডিপোজিট রেখেছেন

বাংলাদেশ ব্যাংকে সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে চিঠি

সিলগালা কৌটায়ও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকার অবকাশ রয়েছে

ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে কর্মকর্তাদের অর্থ-সম্পদ জমা রাখার ব্যক্তিগত সব লকার সাময়িকভাবে ফ্রিজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেসব বিশেষ লকারে অপ্রদর্শিত বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ জমা রয়েছে বলে মনে করছে দুদক।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন দুদক পরিচালক।

ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, গত ২৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর সেফ ডিপোজিট তল্লাশি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে তার জমা করা তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ১০০৫.৪ গ্রাম স্বর্ণ ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। যা তার নিয়মিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি।

এতে আরও বলা হয়, তল্লাশিকালে রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কিছু কর্মকর্তাও সিলগালা করে সেফ ডিপোজিট রেখেছেন। এসব সিলগালা কৌটাতেও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকার অবকাশ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলমান।

চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের দুদক ও সম্পদ পুনরুদ্ধার বিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ওই ভল্টে রক্ষিত সম্পদ সাময়িকভাবে ফ্রিজের সম্মতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গভর্নরকে দেওয়া দুদকের চিঠি ও অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি থাকায় ভল্টের সব লকারের সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে এর মালিকরা তাদের লকার থেকে কোনো ধরনের অর্থ-সম্পদ সরিয়ে নিতে পারবেন না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সব লকার খোলা ও লকারে থাকা অর্থ-সম্পদের তালিকা তৈরির অনুমতির জন্য গত সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজের কাছে আবেদন জমা দিয়েছে দুদক।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, বিগত ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক ডেপুটি গভর্নরের সেইফ ডিপোজিট তল্লাশিকালে রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য কিছু কর্মকর্তাও সিলগালা করে সেইফ ডিপোজিট রেখেছেন। এসব সিলগালা কৌটায়ও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকার অবকাশ রয়েছে। কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টের লকারে রক্ষিত অন্যান্য কর্মকর্তাদের সেইফ ডিপোজিটসমূহ তল্লাশি ও ইনভেন্টরি লিস্ট করার অনুমতি চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন দাখিলের সদয় অনুমতি দিয়েছেন। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় নিরাপত্তা ভল্টে রক্ষিত লকারে সেইফ ডিপোজিট খোলার আবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করার পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।

শিঘ্রই এ সংক্রান্ত আদেশ দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সব লকার খোলা, অর্থ-সম্পদ গণনা ও তালিকা তৈরির জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করার জন্য দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন জমা দেবে দুদক।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print