
চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পিওনকে বলৎকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাটহাজারী থানাধীন ফতেয়াবাদ শাখার কার্যালয়ে মঙ্গলবার (৩রা ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ছুটে আসেন জোনাল ম্যানেজার, এরিয়া ম্যানেজার এবং প্রধান হিসাবরক্ষক। শেষ পর্যন্ত মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের সাথে সমঝোতা করেন মর্মে জানা যায়।
জানা যায়, উক্ত প্রতিষ্ঠানের পিওন মামুন মিয়ার নিয়োগ হয় মাসখানেক আগে। তার বাবা অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। নিয়োগের পর থেকে রাতে কার্যালায়ের আলাদা কক্ষে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কার্যালায়ের আলাদা কক্ষে ঘুমাতেন মামুন। কিন্তু মামুনের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদিন নিজের কামভাব চরিতার্থ করতে চাইতেন অত্র শাখার হিসাবরক্ষক আল আমিন। প্রতিদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে দুশ্চরিত্র আল আমিন পিওন মামুনকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে শরীর ম্যাসাজ করে দিতে বলতেন। এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর মামুন প্রতিবাদ জানিয়ে চাকরি ছেড়ে দেবেন এবং বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আনবেন বলে জানালে আল আমিন তাকে অফিসের টাকা চুরির দায়ে ফাঁসানোর হুমকী দিলে সে প্রতিবাদের সাহস হারিয়ে ফেলে। এই সুযোগে অভিযুক্ত আল আমিন আরো বেপরোয়া হয়ে যায়। সে সরাসরি বলৎকারের চেষ্টা চালাতে শুরু করে। ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর গভীর রাতে বলৎকার চেষ্টা করায় মামুন হাটহাজারী থানায় অভিযোগ প্রদান করেন। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধে এবং চাকরী হারানোর ভয়ে পুলিশের তদন্তের বিষয়টি
স্থগিত করেন মামুন। কর্মকর্তারা তাকে আরো আশ্বস্থ করেন হিসাবরক্ষক আল আমিনের স্ত্রী গ্রামের বাড়ী থেকে আসলে ৫ই ডিসেম্বর ফ্যামিলি বাসা নিয়ে অন্যত্র চলে যাবেন।
এরপর থেকে মামুনকে আর বিরক্ত করেননি আল আমিন। কিন্তু মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আল আমিন হঠাৎ নিজের অসুস্থতার অজুহাতে মাথা ম্যাসাজ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। মামুন সরল বিশ্বাসে রাজি হলে মাথা ম্যাসাজের একপর্যায়ে আল আমিন জোরপূর্বক বলৎকার শুরু করেন। মামুন তাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে চেঁচামেচি শুরু করলে অন্যান্য সহকর্মীদের ঘুম ভেঙে যায়। এসময় মামুন অফিসের পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাট থেকে শাখা ব্যবস্থাপক রাজীব সাহাকে ডেকে বিষয়টি জানান। এরপর ভুক্তভোগী হাটহাজারী থানার ডিউটি অফিসারকে জানালে এস আই আসাদের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন শেষে ভিকটিমকে পরদিন থানায় গিয়ে এজাহার দিতে বলেন।
বিষয়টি জানতে পেরে পরদিন সকাল ১০টার সময় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গেলে সেখানে দেখা যায় জোনাল ম্যানেজার, এরিয়া ম্যানেজার সুশীল এবং প্রধান হিসাবরক্ষক মাহমুদ উপস্থিত থেকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতেছিলেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সবাই হতভম্ব হয়ে কোন প্রকার ভিডিও ধারণ এবং ছবি না উঠানোর অনুরোধ জানান। এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে মোটা অংকের টাকার প্রস্তাবও দেন তারা। ঘটনার বিষয়ে তারা কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অভিযুক্ত আল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ধরণের নির্লজ্জ ঘটনার সাথে তিনি সম্পৃক্ত নন। কোন প্রকার সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তিনি।
ভুক্তভোগী মামুন সকালে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানালেও সন্ধ্যায় ফোনে অনুরোধ করেন এই বিষয়ে কোন প্রকার সংবাদ না করার জন্য। তাকে মীরসরাই শাখায় বদলী করার মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে বলে জানালেও গোপন সূত্রে জানা যায় সমঝোতার আসল রহস্য মোটা অংকের টাকা।
এই ব্যপারে জানতে চাইলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন মাঠকর্মী জানান, হঠাৎ চিৎকার- চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গার পর জানতে পারি আল আমিন স্যার পিওন মামুনকে জোর করে অশালীন কাজের চেষ্টা করেছে। এরপর শাখা ব্যবস্থাপক স্যার আসেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসেন।
এই বিষয়ে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ধরনের একটি বিষয় তিনি জানতে পেরেছেন। ভুক্তভোগী থানায় এসে এজাহার প্রদান করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।