বুধবার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বুধবার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বুধবার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাবান ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজার জামায়াত নেতা রহিম উল্লাহর জানাযায় লাখো মানুষের ঢল

কক্সবাজার প্রতিনিধি: আজ বিকেল ৩টায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও জামায়াতের এমপি প্রার্থী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহর ২য় জানাজা শেষে ভারুয়াখালীর পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জিএম রহিম উল্লাহর ১ম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।

রহিম উল্লাহ জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার জানাজায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ফলে তার দুটি জানাজায় লাখো জনতার উপস্থিতি হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল সাগরগাঁওয়ের ৩১৬ নম্বর কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান রহিম উল্লাহ। তার মৃত্যু রহস্যজনক মনে হওয়ায় মরদেহ ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয় পুলিশ। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় এবং এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে দাবি করায় বিনা ময়নাতদন্তে দাফনের অনুমতি দেয় পুলিশ।

দুপুর ১টায় জিএম রহিম উল্লাহর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ভারুয়াখালী পৌঁছালে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন ছোট-বড় সবাই। এ সময় কাঁদতে থাকেন গ্রামবাসী।

বিকেল ৩টায় তার দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন ভারুয়াখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বশর। শেষে জিএম রহিমুল্লাহকে তার বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তার জানাজায় অংশ নেন- কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী, কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ বাহাদুর, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবদলের সভাপতি শেফায়েত আজিজ রাজু, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর, ভারুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার ও মাওলানা আবদুর রহিম প্রমুখ।

এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে জিএম রহিম উল্লাহ কেমন লোক ছিলেন। রহিম উল্লাহ ভাই বড়মাপের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পরও ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঠিকমতো বাড়ি ভাড়া দিতে পারতেন না। জানাজার মাঠে আপনাদের কথা দিলাম, রহিম উল্লাহ ভাইয়ের পরিবারের জন্য একটি জায়গার ব্যবস্থা করে দেব। তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করব। যে দলই করুক ভালো মানুষের মূল্যায়ন করা সবার দায়িত্ব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, রহিম উল্লাহ আমার বন্ধু। তার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক বিরোধ ছিল তা ঠিক। কিন্তু তার মতো সাহসী নেতা আমি আর দেখিনি। ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি এবং সমাজসেবা ছিল তার কাজ।

কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি জিএম রহিম উল্লাহর সঙ্গে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আমার সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখতেন। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর দিন সকাল থেকে মরদেহ দাফন পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন। মানসিক সাহস যুগিয়েছেন। অসাধারণ মানুষ ছিলেন রহিম উল্লাহ।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথম নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দেন- কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচ এম মাহমুদুর রহমান। এ সময় রহিম উল্লাহর প্রশংসা করেন তিনিও।

রহিম উল্লাহ মঙ্গলবার কক্সবাজার শহরের হোটেল সাগরগাঁওয়ে মারা যান। আগের দিন রাতে হোটেলের চারতলার ৩১৬ নম্বর কক্ষে একাই ঘুমান তিনি। দুপুর পর্যন্ত ঘুম থেকে না ওঠায় তাকে ডাকতে যান হোটেল বয়। এরপর ডাকতে যান হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএম রহিম উল্লাহর শ্যালক শাহেদুল ইসলাম।

শাহেদ গিয়ে প্রথমে দরজা ধাক্কা দেন। কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে ভেন্টিলেটর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন- রহিম উল্লাহ উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছেন। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রহিম উল্লাহ কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি ভারুয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান হন। মৃত্যুকালে চার মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রী রেখে যান তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print