চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন পূর্ব চাম্বলে মহিলা ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে সৌদি প্রবাসীর বাড়ীতে সশস্ত্র হামলায় ২ জন আহত হয়েছেন। এসময় একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে হামলাকারীরা। উক্ত হামলার ঘটনায় বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে অজানা কারণে মহিলা ইউপি সদস্যকে বাদ দিয়ে অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। ২১/০১/২০২৪ ইং তারিখের মামলা নং- ১৭/২০২৪।
মামলা এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ নং চাম্বল ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য ফাতেমা বেগমের স্বামী আবুল কাশেম এবং দেবর মো: আলীর নিকট থেকে ৩ গন্ডা করে মোট ৬ গন্ডা জমি ক্রয় করেন করেন সৌদি প্রবাসী মৌলানা হোছাইন আহমদ। এছাড়া আরো ২ গন্ডা জমি বিক্রি করার জন্য হোছাইন আহমদের নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করেন আবুল কাশের। পরবর্তীতে জমি রেজিস্ট্রি কিংবা টাকা ফেরত কোনটিই না দিয়ে বিদেশে চলে যায় আবুল কাশেম। এই ইস্যু নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসতেছে।
প্রবাসী হোছাইন আহমদ খরিদা উক্ত ৬ গন্ডা জায়গায় মাটি ভরাট ও বাউন্ডারি নির্মাণ করে উন্নয়ন করতে গেলে মহিলা ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় এবং উল্টো চাঁদা দাবী করে। সম্প্রতি নির্মাণাধীন বাউন্ডারি থেকে ফাতেমার লোকজন প্রায় ৬০ হাজার টাকার লোহার রড কেটে নিয়ে যায়। ঘটনার দিন অর্থাৎ শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বহিরাগত লোকজন নিয়ে ফাতেমা বেগম জায়গা দখলের প্রস্তুতি নিয়েছেন এমন সংবাদ পেয়ে প্রবাসী হোছাইন আহমদের ছোট ভাই ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা ও খতিব শাহাদাত হোছাইন মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসলে ফাতেমা বেগমের নির্দেশে আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তার উপর হামলা চালায়। চাচার উপর হামলা চালাতে দেখে প্রবাসী হোছাইন আহমদের ছেলে আলিম ১ম বর্ষ অধ্যয়নরত বেলাল ছুটে আসলে তার উপরও হামলা চালিয়ে ধারালো কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হামলাকারীরা। এসময় শাহাদাতের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাংচুর করে তার সাথে থাকা ৫০ হাজার টাকা এবং উভয়ের সাথে থাকা ২টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাদের বাড়ীর গেটে তালা লাগিয়ে দেয় হামলাকারীরা। পরবর্তীতে এলাকাবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
উক্ত ঘটনায় শাহাদাত হোছাইন মহিলা ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগমসহ ৬ জনকে আসামি করে বাঁশখালী থানায় এজাহার প্রদান করলেও ফাতেমা বেগমকে বাদ দিয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে এজাহার গ্রহণ করে পুলিশ।
এই ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা ও খতিব শাহাদাত হোছাইন বলেন, ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগম সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় এলাকায় সব সময় প্রভাব বিস্তার করেন। দখলবাজ এই মহিলার চরিত্র সম্পর্কে এলাকার সবাই অবগত। জাল জালিয়াতিসহ নানা ধরনের প্রতারণা ও থানার দালালি করা তার মূল পেশায় পরিণত হয়েছে। তিনি আমাদের পরিবারের উপর দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে জুলুম নির্যাতন করে আসছেন। তার ৩ ছেলে সন্ত্রাসী প্রকৃতির হওয়ায় যেকোনো তুচ্ছ কারণেও বিবাদে জড়িয়ে যায়। তার ছেলে জুনাইদ একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি। প্রশাসনের কাছে এই ঘটনায় সম্পৃক্ত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, জায়গা সম্পদের বিষয়ে প্রবাসী মৌলানা হোছাইন আহমদের সাথে ফাতেমা বেগমের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। শুক্রবার ঘটনাস্থলে হঠাৎ করে লোকজনের হাঙ্গামা দেখা যায়। পরে আহত বেলালের হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখে আমরা তাকে হাসপাতালে পাঠাই।
ফাতেমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর সাথে মৌলানা হোছাইন আহমদের জমি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে কিছু লেনদেন থাকতে পারে। ঘটনার সময় আমার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ানোর কারনে আমার ছেলেদের সাথে শাহাদাত হোছাইনের হাতাহাতি হয়। পরিকল্পিতভাবে কোন মারামারি হয়নি। এই ঘটনায় থানায় কেমনে মামলা হলো সেটা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন এই মহিলা ইউপি সদস্য। তিনি বলেন বাদীকে আপোষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাদের পাওনা পরিশোধের শর্তে তারা মানলে আপোষ করে মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৯৯৯ এর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করা হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। মহিলা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনায় সম্পৃক্ততা নেই মর্মে জানতে পারায় তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়নি।