শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

পুকুর ভরাটের অনুমতি পাইয়ে দিতে লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় আওয়ামীলীগ নেতা

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ হাদুমাঝি পাড়ায় পরিবেশের আদেশ অমান্য করে পুকুর ভরাট

৩ মাস পূর্বে পুকুর ভরাট না করতে আদেশ দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক

 পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটা এবং পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এই ২ ধরণের অপরাধের বেলায় কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে পরিবেশের আদেশকেও তোয়াক্কা করে না। পুকুর ভরাট না করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশ থাকলেও আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ৭ নং ওয়ার্ডস্থ হাদুমাঝি পাড়া (মাঝির দোকান) এলাকার সাবের মাস্টার বাড়ীর একমাত্র পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। এই পুকুর ভরাটে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ঘনবসতি এলাকার এই পুকুরটি ভরাট করার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

পুকুর ভরাট না করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশের কপি

জানা যায়, সাবের মাস্টার বাড়ীর একমাত্র পুকুরটির পরিমাপ প্রায় ৪-৫ গন্ডা। স্বার্থান্বেষী মহলটি দীর্ঘদিন ধরে পুকুরটি কৌশলে ভরাটের চেষ্টায় লিপ্ত। প্রায় ২ বছর পূর্বে প্রথম দফায় পুকুরের পাড় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করলেও গত ১২ই ডিসেম্বর সম্পূর্ণ পুকুরটি ভরাটের মিশনে নামে চক্রটি। এলাকাবাসী বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানালে পরিবেশ অধিদপ্তর ১৪ই ডিসেম্বর চক্রের সদস্যদেরকে পুকুর ভরাট না করতে এবং ভরাটকৃত অংশ খননের আদেশ দেন।  তখন পরিবেশের আদেশ মতে পুকুর ভরাট বন্ধ রাখলেও ভরাটকৃত অংশ খনন করেনি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) থেকে তারা পরিবেশের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আবার ভরাট শুরু করে পুকুরটি। ২ দিনে পুকুর ভরাটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। জানা যায়, এই পুকুরটির পূর্বের মালিক প্রায় ৩০ জন হলেও বর্তমানে ক্রয়সূত্রে মালিক মৃত হানিফের ছেলে তৌহিদ এবং মো: ফারুকের ছেলে আনোয়ার হোসেন পুকুরটি ভরাট করতেছে।

পূর্বের পুকুর ভরাটের একাংশ

এলাকাবাসীরা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পুকুর ভরাট না করতে আদেশ দেওয়ার কথা শুনে আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ৩ মাস পরে তারা আবার পুকুর ভরাট করতেছে। আমরা চাই এই পুকুর ভরাটকারীদের কঠোর শাস্তি হউক, আমাদের পুকুর যেন আমরা ফিরে পাই এটাই দাবী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, এই পুকুর ভরাটের জন্য বারবার চেষ্টা করে চক্রটি। প্রবাসী মওলা, হাসান, তৌহিদ, সিরাজ এবং পেয়ারসহ ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী এই পুকুরটি ভরাট করার ব্যাপারে অভিযোগ প্রদান করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম পরিদর্শন করে পুকুর ভরাট না করতে মৌখিক নির্দেশ প্রদান করে। এই পুকুরটির ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে দ্রুত সংস্কারের দাবিও জানান তিনি। এরপরে বছর শেষে অর্থাৎ ১২ই ডিসেম্বর আবার পুকুর ভরাট শুরু করলে আমরা এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানাই। তখন পরিবেশ লিখিত আদেশে পুকুর ভরাট না করতে এবং ভরাটকৃত অংশ খননের কথা বলেন। সেই আদেশের ৩মাস পর এখন রাতের অন্ধকারে একেবারে পুরো পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে।

তৌহিদ

অন্য একজন এলাকাবাসী জানান পুকুর ভরাটের চক্রটিকে সহযোগিতা করতেছেন এলাকার মুরুব্বি স্বঘোষিত মহল্লা কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম। তিনি পুকুর ভরাটে সহযোগিতা করবেন বলে এই চক্রের কাছ থেকে ১লক্ষ টাকা নিয়েছেন মর্মে গোপন সূত্রে তথ্য রয়েছে। তিনি কয়দিন আগে এলাকায় বলাবলি করেছেন পুকুর ভরাটে তিনি সহযোগিতা করবেন, নর্দমার পানি ঢুকে পুকুর নোংরা হয়ে যায় তাই পুকুর ভরাটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এমন একটি জাল গণস্বাক্ষরকৃত আবেদন পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসককে দিবেন। যদিও আমাদের এলাকায় কোন মহল্লা কমিটি নেই। আমরা চাই এই পুকুর পূর্বের পরিবেশ ফিরে পাক।

পুকুরের একাংশের সাবেক মালিক মো: আজিম বলেন, আমাদের পরিবারের সম্পূর্ণ অংশ আমরা সব ওয়ারিশরা হস্তান্তর করে দিয়েছি। আমরা পুকুরই বিক্রি করেছি, সেখানে ভরাট করে বাসা বাড়ী করার তো কথা ছিলো না।

পুকুর ভরাট না করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশ থাকার পরেও কেন পুকুর ভরাট করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তৌহিদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আমার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এখানে সাংবাদিকদের আর কাজ নেই এমন মন্তব্য করে ফোন কেটে দেন।

পুকুর ভরাটের ব্যাপারে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, পুকুর ভরাটের বিষয়ে আমার করার কিছু নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট অভিযোগ প্রদান করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন আজকে অফিস বন্ধ, কেউ অফিসে নেই।তবুও আমি বিষয়টি দেখবো।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print