শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই জিলকদ ১৪৪৬ হিজরি

বীর মুক্তিযোদ্ধার কোমরে দড়ি ও হাতকড়ার ঘটনায় নিন্দার ঝড়

প্রভাতী ডেস্ক : নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারকে হাতকড়া ও কোমরে রশি বেঁধে আদালতে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এমন কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। নিন্দা জানিয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদও।

কয়েকজনের সঙ্গে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তাকেও নরসিংদীর আদালতে পাঠানো হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হাতকড়া ও কোমরে রশি বাঁধার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহন। তিনি বলেন, আবু ছালেক রিকাবদার যে দলই করুক না কেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আমার বাল্যবন্ধু। তাকে থানায় নেওয়ার সময় যেন কোনো প্রকার অসম্মান বা হয়রানি না করা হয় এবং কোনো মামলা না থাকলে যেন রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় সেজন্য ওসিকে ফোনে অনুরোধ করেছিলাম। তবে পরদিন কোমরে রশি বেঁধে তাকে থানা থেকে আদালতে পাঠানোর ছবি দেখে খুবই বিস্মিত হই। এরপর আবারও ওসিকে ফোন করে এ ব্যাপারে জানতে চাই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ থাকায় তাকে না ছেড়ে গত বছরের নভেম্বর মাসের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

সংসদ সদস্য মোহনের দাবি, ‘জেলা বিএনপির এক নেতা তার নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পুলিশকে দিয়ে এমন জঘন্য ও ন্যক্কারজনক কাজ করিয়েছেন বলে শুনতে পেয়েছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারকে পরোয়ানা ছাড়াই আটক করে শিবপুর মডেল থানা পুলিশ। পরদিন শনিবার তাকে গত বছরের একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বিকেলে কয়েকজনের সঙ্গে হাতকড়া ও কোমরে রশি বেঁধে থানা থেকে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারকে হাতকড়া ও কোমরে রশি বাঁধার কিছু ছবি শনিবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই নিন্দার ঝড় ওঠে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন বলেন, শনিবার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা বের হয়। এ কর্মসূচি শিবপুরে সফল না হতে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে আটকের পর পুলিশ এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছে।

তার অভিযোগ, ‘নরসিংদীর পুলিশ সরকারের নয়, বিশেষ এক ব্যক্তির জন্য। শনিবার দিনগত রাতে আবু ছালেক রিকাবদার ও আমাকেসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এ বিশেষ ব্যক্তির বাহিনীকে পুলিশ সহায়তা দিয়ে নরসিংদীকে কয়েক দিন ধরে একটি ভয়ানক পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা করছে।’

ডাকসুর সাবেক জিএস খোকন আরও বলেন, ‘যারা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে, পুলিশ তাদের পক্ষে কোন স্বার্থে নিয়োজিত। তা জেলাবাসীর কাছে একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে। জেলাবাসী এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধার বিষটি জানেন না বলে দাবি করেন শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার।

তিনি বলেন, ‘আবু ছালেক রিকাবদারকে কোমরে রশি দিয়ে বাঁধার বিষয়টি জানা নাই। যারা থানা থেকে আদালতে নিয়ে গেছেন, তারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোর্ট ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, এটা কোর্ট পুলিশের কাজ নয়। এটা শিবপুর থানা পুলিশের কাজ। তাই এ বিষয়ে তারাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন।

তবে এসব অভিযোগের তীর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহীর দিকে কেন ছোঁড়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনার সঙ্গে আমার যোগসাজশ আছে তা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কারণ আবু ছালেক রিকাবদারের সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে আমি ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো সিনিয়র নেতা ছিল না।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print