
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর শিশু আলীনা ইসলাম আয়াত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয় দেড়মাস আগে। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আবীর আলী তার এক বন্ধু মো. হাসিবকে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। এমনকি তার কাছে অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের কথাও স্বীকার করে। কিন্তু হাসিব এই তথ্য কাউকে জানাননি। পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানার পর তা গোপন করার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে আবীরের ওই বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
বুধবার(৭ ডিসেম্বর) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন হাসিব। তিনি নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট এলাকার ভাই ভাই হোটেলের কর্মচারী।
পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, সময়মতো হত্যাকাণ্ডের তথ্য হাসিব সবাইকে জানালে নৃশংসভাবে লাশ টুকরো টুকরো করার সুযোগ পেতো না ‘খুনি’ আবীর। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, ‘আবীর যখন আয়াতকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে তখন বিষয়টি হাসিবকে জানিয়েছিল। তাকেও সঙ্গে থাকতে বলেছিল। কিন্তু সে থাকতে রাজি হয়নি। কিন্তু বিষয়টি কাউকে জানায়ওনি।’ তিনি বলেন, আয়াতকে হত্যার পর লাশ আবীরের মায়ের বাসায় রাখার বিষয়টিও হাসিবকে জানায়, তখনও সে কাউকে বলেনি। আবীরের জবানবন্দিতেও তার নাম আসায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে এসব তথ্য জানিয়ে সে জবানবন্দি দিয়েছে।’
আদালত সূত্র জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হাসিব জানিয়েছে, সে আয়াতদের ভবনের পাশে ভাই ভাই হোটেলে মেসিয়ার (রেস্তোরাঁ কর্মী) হিসেবে কাজ করে। সে ছোট থেকে বড় হয়েছে ওই এলাকায়। তার মা-বাবা মারা গেছেন। ছোটবেলা থেকে আবীরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব। আবীর বয়সে বড় হওয়ায় তাকে ভাই বলে ডাকতো। গত অক্টোবরের শুরুতে নেভি গেইট এলাকার দেওয়ালে বসে আড্ডা দিচ্ছিল দু’জন। এসময় আবীর হাসিবকে বলে, মনজুর ভবনের মালিক মনজুর হোসেনের নাতনী আয়াতকে অপহরণ করে মেরে ফেলবে সে। এরপর মনজুর হোসেনের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা নিবে। তাকেও সঙ্গে থাকতে বলে। কিন্তু সে রাজি না হলে তখন কাউকে কিছু না জানাতে অনুরোধ করে আবীর।
জবানবন্দিতে হাসিব আরও জানায়, গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে হোটেলে কাজ করার সময় লোকজনকে ছুটোছুটি করতে দেখে জানতে পায়, আয়াতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাজ শেষ হলে হোটেল থেকে বের হয় হাসিব। আয়াতদের ভবনের বিপরীতে আইয়ুব ভবনের সামনে আবীরের সঙ্গে তার দেখা হয়। দু’জনে মিলে লেবার কলোনির দিকে আয়াতকে খুঁজতে যায়। এসময় আবীর আয়াতকে কিছু করেছে কিনা জানতে চায় হাসিব। আবীর তাকে জানায়, আয়াতকে অপহরণ করে সে মেরে ফেলেছে। লাশ আকমল আলী রোডের পকেট গেইট এলাকায় তার মায়ের বাসায় আছে। আয়াতের দাদার কাছে দুই একদিন পর ২০ লাখ টাকা চাইবে। টাকা নেওয়ার সময় তাকেও থাকার প্রস্তাব দেয়। তাহলে তাকেও কিছু টাকা দিবে আবীর। তাতে রাজী হয়নি হাসিব। কিন্তু এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেওনি।
কাউকে না জানানো প্রসঙ্গে মো. হাসিব জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘আয়াতকে মেরে ফেলেছে শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি। কারণ, আমার মনে হচ্ছিল, এখন এসব বললে মানুষ আমাকেও সন্দেহ করবে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
গত ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট এলাকার ওয়াজ মুন্সীর নতুন বাড়ির বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু আলীনা ইসলাম আয়াত। এ ঘটনায় গত ২৫ নভেম্বর তাদের ভাড়াটিয়া আজহারুল ইসলামের ১৯ বছর বয়সী ছেলে আবীর আলীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে আয়াতের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ছয় টুকরো করে সাগরে ও খালে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে আবীর। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর খাল থেকে শিশু আয়াতের দুই পা ও খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আবীরের মা-বাবা, বোন এবং বন্ধু হাসিবসহ মোট ৫ জনকে আটক করা হলো।