
প্রভাতী ডেস্ক : আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় যুব সমাজকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খাদ্যপণ্য উৎপাদন- প্রক্রিয়াজাতকরণে যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, অনেক উন্নত দেশে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজমান। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের প্রতি ইঞ্চি জমিতে যেমন আবাদ করতে হবে, তাছাড়া খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। যুব সমাজকে আহ্বান করব, তারা যেন আরো উদ্যোগ নেয়।
মঙ্গলবার(১ নভেম্বর) জাতীয় যুব দিবস-২০২২ এর অনুষ্ঠান উদ্বোধন ও যুব পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খাদ্যপণ্য উৎপাদন- প্রক্রিয়াজাতে আমরা যেমন দেশের চাহিদা মেটাতে পারব, আবার অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে আমরা সহযোগিতাও করতে পারব। একই সঙ্গে দেশকে উন্নত করতে ‘যে কোনো কাজ’ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতেও যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যে কোনো কাজ করে, নিজে উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কারণ কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখি না। কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখব না।
প্রতি জেলা-উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে তারা যেন কাজ করতে পারে এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ, একটি প্রশিক্ষিত যুবশ্রেণি গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য।’ দেশে এখন কত প্রশিক্ষিত যুবক রয়েছে, তারও একটি ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, দক্ষ যুব সমাজ আমাদের সম্পদ। তাদের কাজে লাগাতে হবে। তারাই ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকরাই শক্তি। তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমরা মনে করি, প্রশিক্ষিত যুব সমাজ গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। আজ কত প্রশিক্ষিত যুবক আছে, তার ডাটাবেজ থাকা দরকার। এখনো বাংলাদেশের অনেক কর্মক্ষম যুবশক্তি আছে, এটাই আমাদের বড় শক্তি। আমাদের এই জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যুবকরা এত বেশি মেধাবী, তারা সব কাজে পারদর্শিতা দেখাতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত যুব সমাজ গড়ে তুলতে চাই। এজন্য নানা উদ্যোগও গ্রহণ করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। কারও কাছে হাত পেতে বা মাথা নিচু করে নয়। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
এসময় বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের সঙ্গে আত্মিক ও মানসিক সম্পর্ক ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। তিনি তরুণদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, অসত্যকে পরিহার করতে, শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা জোগাতেন। তিনি বলেন, তরুণ যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় দেশ গড়ার জন্য যুবক ও তরুণদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘কাজ করো কঠোর পরিশ্রম করো, না হলে বাঁচতে পারবে না, শুধু বিএ, এমএ পাস করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুলে যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে মিলনায়তন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আজহারুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে আত্মকর্মসংস্থানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ জন আত্মকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ছয় যুব সংগঠকসহ মোট ২১ জন সফল যুবককে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২ দেওয়া হয়েছে।