
প্রভাতী ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৭৮তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনের এই লগ্নে বিএনপি প্রধান অসুস্থ হয়ে গুলশানের বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জন্মদিন উপলক্ষে আড়ম্বরপূর্ণ কর্মসূচির বদলে সারা দেশে নেত্রীর সুস্থতা কামনা করে ১৬ই আগষ্ট (মঙ্গলবার) দোয়া মাহফিল করবে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন।
খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুরে। তার বাবা এস্কান্দার মজুমদার চাকরিজীবী ছিলেন। মা তৈয়বা মজুমদার ছিলেন দিনাজপুরের চন্দন বাড়ির মেয়ে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। ১৯৬০ সালের আগস্টে বগুড়ার ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত সেনাকর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সাথে তিনি বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বেগম জিয়ার দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন এবং ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ইন্তেকাল করেছেন। তারেক রহমানের ঘরে তার এক নাতনি জাইমা ও আরাফাত রহমানের ঘরে জাফিয়া ও জাহিয়া নামে দুই নাতনি রয়েছে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশী-বিদেশী চক্রান্তে বিপথগামী সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এর পর পরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে খালেদা জিয়ার। দলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন। ১৯৮৩ সালের মার্চে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং ’৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮৪-এর ১ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া।
১৯৯৩ সালে তিনি সার্কের প্রথম মহিলা চেয়ারপারসন হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট নির্বাচনে জয়লাভের পর তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে। ওয়ান-ইলেভেনের পর মইন-ফখরুদ্দীন সরকার ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে কারাবন্দী করে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি। সেইবার কারাগারে প্রথম জন্মদিন কেটেছে তার। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার অনড় মনোভাবের কারণে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় ওই সরকার। পরে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কাঙ্খিত ফল না পেয়ে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। সেই থেকে সরকারি দলের দমন-পীড়ন ও মামলা-হামলার বৃত্তে বন্দী দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জন করে দলটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা হয় বেগম জিয়ার।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্তে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই থেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে পাঁচ দফায় লিভার সিরোসিস, হার্ট জটিলতাসহ নানা রোগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে।
সারা দেশে দোয়া মাহফিল : খালেদা জিয়ার জন্মদিনে তার সুস্থতা কামনায় আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
গতকাল রোববার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে তার রোগমুক্তি ও সুস্থতা এবং দেশব্যাপী চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে তাদের রূহের মাগফিরাত ও যারা আহত হয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনায় আগামীকাল ১৬ আগস্ট দেশব্যাপী মহানগর-জেলা-উপজেলা ও থানায় পর্যায়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
রিজভী আরো বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বের ভূমিকা তুলে ধরে রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা-ভরসার এক মূর্ত প্রতীক। সারাটা তিনি জীবন সংগ্রাম করেছেন, রাজনীতি করেছেন। এমন একটি নৈতিকতার মানদণ্ড তিনি তৈরি করেছেন জনগণের কাছে যে ওয়াদা দেন সেই ওয়াদা থেকে কোনো দিন সরে আসেননি। তিনি সব সময় জনগণের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকে খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রেখে অবৈধ সরকার অবৈধ কাযর্ক্রম করছে। আজকে যদি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার থাকত তা হলে বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় রাজনীতিতে তার যে কথা, তার যে কণ্ঠ আমরা সবাই শুনতে পারতাম। যেহেতু অবৈধ সরকার আছে জনগনের স্বার্থে, কোটি কোটি মানুষের স্বার্থে তার কণ্ঠস্বর যাবে গণতন্ত্রের পক্ষে, বাকস্বাধীনতার পক্ষে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে, গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে। এটি শেখ হাসিনা ভয় পায় বলেই তাকে বন্দী করে রেখেছে। আজ তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম, গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।