
এম.জিয়াউল হক: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বি সি আই সি-এর সার ডিলার নিয়োগে চরম অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই দূর্নীতি তদন্ত পূর্বক বর্তমান ডিলার বাতিল করে পুনরায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিলার নিয়োগের জন্য উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ পরিচালক বরাবর অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। এই অভিযোগ প্রদান করেন স্থানীয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিলার প্রার্থী মেসার্স অর্পি বীজ সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী বাবুল চন্দ্র দেব নাথ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানাধীন ১০ নং জঙ্গল সলিমপুর ইউনিয়নের জন্য বি সি আই সি কর্তৃক সার ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ১৫ জুলাই। উক্ত ডিলারের জন্য আবেদন করেন ৪ জন প্রার্থী। তারা হলেন, ১০ নং ইউনিয়নের বাসিন্দা মেসার্স অর্পি বীজ সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী বাবুল চন্দ্র দেব নাথ, ৫ নং বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের বাসিন্দা ওবায়দুল হক এন্ড সন্সের সত্ত্বাধিকারী আবু কাউছার আলী, ৭ নং ইউনিয়নের বাসিন্দা রিয়া ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী মো: ইউসুফ এবং ১০ নং ওয়ার্ডের অন্য একজন বাসিন্দা। অন্যান্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিলার নিয়োগের সুপারিশ করতে হলে ১০ নং ইউনিয়নের ২ প্রার্থীর জন্যই করতে হয়। নীতিমালা অনুযায়ী যদি একই এলাকায় ২ জন যোগ্য প্রার্থী থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে লটারীর মাধ্যমে ডিলার নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন অযুহাতে ১০ নং ইউনিয়নের ২জন এবং ৭ নং ইউনিয়নের ১জন প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ৫ নং ইউনিয়নের বাসিন্দার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা মোতাবেক একটি ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগ প্রদানে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। যদি স্থানীয় ডিলার প্রার্থী না থাকে তাহলে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বাসিন্দা ২য় অগ্রাধিকার পাবেন। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বাসিন্দাও না থাকলে উপজেলার বাসিন্দা ৩য় অগ্রাধিকার পাবেন। কিন্তু ১০ নং সলিমপুরের সার ডিলার নিয়োগে অগ্রাধিকার নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ওবায়দুল হক এন্ড সন্সের সত্ত্বাধিকারী আবু কাউছার আলী ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই দোকান-গোডাউন ভাড়া নিয়েছেন। এই ডিলার নিয়োগ পেতে প্রথম থেকেই তিনি মরিয়া ছিলেন, শুরু করেন বিভিন্ন লবিং তদবীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কোন ডিলার শূন্য হলে স্থানীয় বা দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। ইউনিয়নের স্থানীয় বাজারে বীজ-সার ও কীটনাশকের দোকান আছে এমন ব্যবসায়ীরা আবেদন করতে পারবেন। আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রার্থীদের যোগ্যতা তদন্তের জন্য উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সরজমিনে তদন্ত ও পরিদর্শন প্রতিবেদন উপজেলা কমিটিতে পেশ করে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রস্তুতকৃত প্রাথমিক তালিকা জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। জেলা কমিটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সুপারিশসহ বিসিআইসি ঢাকাতে প্রেরণ করা হয়। ঢাকা থেকে নিয়োজিত ডিলারকে চিঠি প্রেরণ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানায়, প্রথম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিলার প্রার্থী মেসার্স অর্পি বীজ সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী বাবুল চন্দ্র দেব নাথকে অযোগ্য প্রমাণ করতে তদন্ত প্রতিবেদনে তার গোডাউনকে রিকশার গ্যারেজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া মাসিক সভায় স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব দিদারুল আলমের প্রদানকৃত সুপারিশপত্রও তার ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অন্য দুইজন প্রার্থীকেও বিভিন্নভাবে অযোগ্য প্রমাণ করে ৫ নং বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের বাসিন্দা ওবায়দুল হক এন্ড সন্সের সত্ত্বাধিকারী আবু কাউছার আলীকে ডিলার নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
নিজেকে সার ডিলারের যোগ্য প্রার্থী দাবী করে বাবুল চন্দ্র দেব নাথ বলেন, আমি ১০ নং সলিমপুর ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। দীর্ঘ ১২ বছর যাবত ফৌজদারহাট বাজারে আমি সুনামের সাথে বীজ ও কীটনাশকের ব্যবসা করে আসতেছি। সার ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে যেসব শর্তের উল্লেখ করা হয়েছে সকল শর্ত আমি পূরণ করতে পেরেছি। আমার জন্য এমপি মহোদয়েরও লিখিত সুপারিশ ছিলো। এরপরেও আমাকে অযোগ্য প্রমাণ করা হলো, যা খুবই দুঃখজনক। তদন্ত করার সময় সহকারী কৃষি অফিসার সুভাষ চন্দ্র আমার কাছ থেকে কিছু অনৈতিক সুবিধা চেয়েছিলেন, এটা দিইনি বলে হয়তো ডিলার আমার হাতছাড়া হয়েছে। এই অনিয়ম প্রসঙ্গে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছি। আমার দাবী হলো, আমাকে সার ডিলার নিয়োগ না করলেও কেন আমাকে অযোগ্য চিহ্নিত করা হলো সেটার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী কৃষি অফিসার সুভাষ চন্দ্র বলেন, ডিলার নিয়োগের তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছেন কৃষি অফিসার। এখানে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এসব ব্যাপারে কৃষি অফিসার ভালো জানবেন।
দূর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা মুঠোফোনে বলেন, মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে শতভাগ সঠিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। সেই অনুযায়ী জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ডিলার নিয়োগ দিয়েছেন। এখানে আমি কোন প্রকার দূর্নীতি করিনি।
অসুস্থ থাকায় অভিযোগের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ পরিচালক ও উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ১০ নং সলিমপুর ইউনিয়নের সার ডিলার নিয়োগে দূর্নীতি হয়েছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সেটা তদন্ত করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।