রবিবার, ৬ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ৬ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ৬ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

প্রথমদিন যোগদান না করলেও কেউ চাকরি হারাবে না, ৫ আগষ্টের পর আসতে পারে শিথিলতা- জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

প্রভাতী ডেস্ক : চলমান মরনঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ৫ আগস্টের পর আরো বাড়ছে। তবে শিল্পকারখানা খোলাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতা আসতে পারে। সেই সাথে কিছু নতুন শর্ত আরোপ করা হতে পারে।

শনিবার (৩১ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চলমান কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ। সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ সময় শুধু মাত্র খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন-সংরক্ষণ ও ওষুধ খাত ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিল্প-কারখানা করে দেয়া হলেও ঈদের দুদিন পর থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ২৭ জুলাই কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এতে চরম ভোগান্তি নিয়ে কর্মস্থলে আসতে বাধ্য হন চাকুরিজীবিরা।

এরই মধ্যে ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বন্ধই থাকছে দোকান ও শপিংমল এবং গণপরিবহন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাইরে বের হওয়াও নিষেধ।

কিন্তু এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসেনি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি। বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। এমন পরিস্থিতে বিধিনিষেধ বা কঠোর লকডাউনের মেয়াদ আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সংক্রমণ পরিস্থিতির সঙ্গে অর্থনীতি ও মানুষের জীবিকার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে সরকারকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তাই আগামীতে বিধিনিষেধ বাড়ানো হলেও কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার কথাও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শিথিলতা আসছে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। বিষয়টি এখনও আলোচনার পর্যায়ে আছে।

৫ আগস্টের পর বিধিনিষেধ বাড়বে কি-না, জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আপাতত রফতানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দিচ্ছি। সেটাও সীমিত পরিসরে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৫ আগস্টের পর কী হবে আমরা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। প্রধানমন্ত্রী এখনো সিদ্ধান্ত দেননি। আগামী ৩ আগস্ট সিদ্ধান্ত জানানোর চেষ্টা করব। না হলে ৪ আগস্ট সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বিধিনিষেধ ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উনারা সুপারিশ করেছেন আমরা জানি। সংক্রমণ কমাতে গেলে আমাদের যেসব বিকল্পগুলো আছে, সেগুলো আমরা চিন্তা করছি। আমাদের যদি কিছু অফিস খুলতে হয়, সেই অফিসের জনবল কী হবে? আমরা যতটা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেটি (সুপারিশ) অবশ্যই আমাদের মাথায় আছে। কারণ সবকিছুর সমন্বয় আমাদের করতে হবে। সেজন্য আমরা বলছি যে, একটু সময় নেব। ৩ বা ৪ তারিখে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দেব।

তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী যে শিল্প কারখানাগুলো আছে, সেগুলো আগামীকাল (১ আগস্ট) থেকে খুলে দেওয়া হবে এবং শুধুমাত্র যারা ঢাকাতে আছে, কারখানার আশেপাশে যারা রয়ে গেছে, তাদেরকে নিয়ে তারা কাজগুলো করবে ৫ তারিখ পর্যন্ত। আমরা এর ভেতরে সিদ্ধান্ত নেব, ৫ তারিখের পর কী হবে।

৫ তারিখের পর কী হবে সেটির এখনো সিদ্ধান্ত পাইনি। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত জানাবেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।

কিন্তু কারখানার শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন- বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, গতকালকে ( ১ আগষ্ট শুক্রবার) আমরা বিষয়টি ক্লিয়ার করেছি। মিটিংয়ে মালিকরা কথা দিয়েছেন, যারা শুধু ঢাকায় আছেন তাদেরকে নিয়েই এ কর্মকাণ্ড শুরু করবে, কেউ চাকরি হারাবে না।’

৫ তারিখের পর পর্যায়ক্রমে তাদেরকে নিয়ে আসবে, একেবারে না। এক্ষেত্রে কিন্তু ছাঁটাইয়ের কোনো আশঙ্কা নেই। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানও এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কাউকে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ এখানে ছাঁটাই হবে না। ৫ তারিখের পর ধীরে-ধীরে তারা কীভাবে আসবে, আমরা জানাব।

৫ তারিখের পর বিধিনিষেধ থাকছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি আসলে কী হবে, এখন তা চূড়ান্তভাবে বলতে পারছি না। সেটি আমাদের বলাও উচিত হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিভিন্ন প্রস্তাব আছে, সেগুলো বিবেচনা করে কীভাবে করলে এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সেটি আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের কাজকর্মগুলো, যেগুলো একেবারেই অপরিহার্য, সেগুলো চালানো। সেটি কী করলে ভালো হবে, সেজন্য আরেকটু সময় আমাদের লাগবে।

শ্রমিকদের ধাপে-ধাপে নিয়ে আসা হবে। সেক্ষেত্রে গণপরিবহন চালু হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কী হবে, সেটি নিয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা নেই।

এদিকে শুক্রবার (৩০ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, আমরা কীভাবে এই সংক্রমণ সামাল দেব? রোগীদের কোথায় জায়গা দেব? সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে কি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব? অবস্থা খুবই খারাপ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বিবেচনাতেই আমরা বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখা উচিত।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print