
বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানাধীন ১০ নং চাম্বল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আজানী পাড়ার সৌদি প্রবাসী মৌলানা হোছাইন আহমদের সাথে পার্শ্ববর্তী মো: আবুল কাশেম এবং তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের প্রতারণার প্রতিবাদ করায় অত্র এলাকার আরেক প্রবাসী মো: জসীমের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়েরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলানা হোছাইন আহমদ আবুল কাশেমের নিকট থেকে ৩ গন্ডা এবং আবুল কাশেমের ভাই মো: আলীর নিকট থেকে ৩ গন্ডা জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে আবুল কাশেম এবং তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম উক্ত প্লটে আরো ৩ গন্ডা জমি বিক্রির প্রস্তাব করলে হোছাইন আহমদ ২ লক্ষ টাকা প্রদান পূর্বক একটি বায়না দলিল সৃজন করেন। উক্ত বায়না দলিলের মেয়াদ ছিলো ৬ মাস। কিন্তু ৮ বছর পরেও তারা জমি রেজিষ্ট্রি দেয়নি। আবুল কাশেম এবং ফাতেমা বেগম আজকাল করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। হোছাইন আহমদের পক্ষ নিয়ে তাদের এই প্রতারণার প্রতিবাদ করেন প্রবাসী মো: জসীম। তার এই প্রতিবাদই কাল হলো, শিকার হতে হলো মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার। ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে জসীমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে বাঁশখালী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত উক্ত মামলার তদন্তভার বাঁশখালী থানাকে প্রদান করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, জমি বিক্রির জন্য বায়না চুক্তি করে সঠিক সময়ে উক্ত জমি রেজিষ্ট্রি না দিয়ে আবুল কাশেম এবং ফাতেমা বেগম অন্যায় করেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় জসীমের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তারা বলেন, হোছাইন আহমদ সোদি আরব থেকে দেশে খুব কম আসেন। তাই জসীম দেশে আসলে হোছাইনের প্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্ন কাজকর্ম সমাধান করেন। সেই হিসাবে জসীম ফাতেমা বেগমকে হোছাইনের সাথে জমির রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেন। এই কারণে ফাতেমা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে জসীমকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন। জসীমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা কোনমতে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি সাধ্যমত এলাকার দরিদ্র-অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগীতা করেন। তাছাড়া ফাতেমা বেগমের কাছে কোন অট্টালিকা ধনসম্পদ নাই যে তার কাছে জসীম চাঁদাবাজি করবে।
এই ব্যাপারে মো: জসীম বলেন, মৌলানা হোছাইন আহমদ সম্পর্কে আমার চাচা। আমি সৌদি আরব থেকে দেশে আসলে আমার চাচা আমাকে বিভিন্ন দায়িত্ব প্রদান করেন। গতবার ছুটিতে এসে আমি উনার অর্থায়নে নির্মিত ইমাম আবদুল মালেক সাহেব জামে মসজিদের নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করি। এইবার দেশে আসার পর উনার খরিদা জমিতে মাটি ভরাটের কাজ দেখাশুনা করি। উক্ত প্লট ভরাটের সময় ফাতেমা বেগম আমাকে বলেন, তার কাছ থেকে মৌলানা হোছাইন বায়না বাবদ ২ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছেন। যেই প্লট ভরাট করা হচ্ছে সেটার পাশে ২কড়া জমি ভরাট করতে বাকী জমি অন্যদিক থেকে রেজিষ্ট্রি দিবে। সেখানে যেসব গাছপালা ছিলো সেগুলোর দামও নিয়েছে। তার কথায় আমি উক্ত ২ কড়া জমি ভরাট করি। কয়দিন পর ফাতেমা বলেন, উক্ত ২ কড়া জমি রেজিস্ট্রি দিবেন না তাই মাটি সরিয়ে ফেলতে। এই কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে তীব্র প্রতিবাদ করি।
এই প্রতিবাদের জের ধরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করা হলো। প্রশাসনের নিকট আমার অনুরোধ, উক্ত মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করা হউক। সুষ্ঠু তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ঘটনার ব্যাপারে ফাতেমা বেগম বলেন, মৌলানা হোছাইন আহমদ আমাদের আত্মীয় । উনার সাথে আমার স্বামী আবুল কাশেমের ২ লক্ষ টাকায় বায়না চুক্তির ঘটনা সত্য, উক্ত চুক্তিপত্রে আমিও সাক্ষী। আমার স্বামী দেশে না থাকায় উনাকে জমি রেজিষ্ট্রি দিতে পারেন নি। এছাড়া আমরা এখন জমি বিক্রি করতে ইচ্ছুকও নই। কারণ আমার ছেলে মেয়ের জন্য জমি দরকার। জোগাড় করতে পারলে উক্ত ২ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে দিয়ে দিব। জসীমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের প্রসঙ্গে ফাতেমা বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করিনি। তিনি আমার জমি থেকে গাছ কেটেছেন তাই মামলা করেছি। ক্ষতিপূরণ দিলে সেই মামলা প্রত্যাহার করে নিব।
ঘটনার ব্যাপারে মৌলানা হোছাইন আহমদ মুঠোফোনে বলেন, বায়না দলিল করে জমি রেজিষ্ট্রি না দিয়ে ফাতেমা বেগমের স্বামী আবুল কাশেম আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। আবুল কাশেম জমি রেজিষ্ট্রি দিচ্ছে না স্ত্রীর কুপরামর্শ নিয়ে। ফাতেমা আমাকে বলেছেন চুক্তিপত্রের চাইতে ৩ গুণ বেশি টাকা দিলে স্বামীকে বিদেশ থেকে এনে জমি রেজিষ্ট্রি দিবেন। তার মানে ফাতেমা বেগমই তো চাঁদাবাজি করতেছেন। জসীম আমার পক্ষে কথা বলেছে তাই তাকে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করতেছে। মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যাবার ভয়ে কেউ ফাতেমা বেগমের নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। ফাতেমা বেগম মহিলালীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এই ধরণের অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। বাঁশখালী আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে এমনকি এমপি সাহেবের সাথে ফাতেমার সখ্যতা রয়েছে বলে অসহায় মানুষকে হুমকি দেয়। এই বিষয়ে নেতৃবৃন্দের সচেতন হওয়া অতীব জরুরি। দীর্ঘ ৮ বছর পরে আমি টাকা ফেরত নিব না, আমার সাথে প্রতারণার বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জসীমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ সফিউল কবীর বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানে পুলিশ সবসময় শতভাগ আন্তরিক। মিথ্যা মামলা করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাসময়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।