
এম.জিয়াউল হক: চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন নাপোড়া ৮ নং ওয়ার্ডের মিরাপাড়ায় ভাগ্নে কর্তৃক খালার প্রায় ১০ লক্ষ টাকার জমি জবর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে সরকারি রিজার্ভের ৪০ শতক জমি এক লক্ষ টাকা মূল্যে মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নিকট বিক্রয় করেন বর্তমান জবর দখলকারী মোহাম্মদ মোতালেবের পিতা আবুল খায়ের। উক্ত জমি ক্রয়ের পর থেকে রুহুল আমিন সেখানে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপন করে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ভোগ দখল করে আসতেছিল। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার ফলমূল এবং সবজি উৎপন্ন হতো।
সম্প্রতি উক্ত জমির দাম বেড়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা হওয়ায় মোতালেব দীর্ঘদিন ধরে জমিটি জবর দখলের পাঁয়তারা করে আসতেছিল। ২০২০ সালে তার খালাতো ভাই অর্থাৎ রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল হককে উক্ত জমি ৩ লক্ষ টাকায় বিক্রির প্রস্তাব দেন।
আব্দুল হক জায়গা বিক্রি করবে না মর্মে সাফ জানিয়ে দিলে মোতালেব হুমকী দিয়ে বলেন, জায়গাটি তারা দখল করে নিবে এবং সেখানে কেউ গেলে তাকে হত্যা করা হবে। এরপরেও রুহুল আমিন অনড় থাকায় মোতালেব মীমাংসার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং সমাজসেবক আজিজ সাহেবের কাছে নালিশ প্রদান করলে তিনি উক্ত জমি ৫ লক্ষ টাকায় মোতালেবের নিকট বিক্রি করার জন্য রুহুল আমিনকে পরামর্শ দেন। কিন্তু জমিটি রুহুল আমিনের প্রয়োজন হওয়ায় বিক্রি না করার কথা বললেই মোতালেব ২০২১ সালের এপ্রিলে সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে উক্ত জমি দখলে করে সেখানে জোরপূর্বক একটি গৃহ নির্মাণ করেন। এ ব্যাপারে রুহুল আমিন বাঁশখালী থানায় অভিযোগ প্রদান করলে পুলিশ ২ লক্ষ টাকা দিয়ে উক্ত জমি মোতালেবের নিকট বিক্রি করতে বলেন। এরপরে মোতালেব আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য যে, তদন্তের জন্য পুলিশের টিমের সাথে রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল হক উক্ত জমিতে গেলে পুলিশের সামনেই তাকে মারধর করে মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন মোতালেব।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায় মোতালেবের বাবা আবুল খায়েরের নিকট থেকে ক্রয়ের পর রুহুল আমিন প্রায় ১২ -১৩ বছর ধরে এই জমিটি ভোগ দখল করতেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে মোতালেব ২ মাস আগে লোকজন জমায়েত করে সেখানে গৃহ নির্মাণ করেন। এছাড়া বিস্তারিত আর কিছুই জানেন না তারা।
ভুক্তভোগী রুহুল আমিন বলেন, শেখেরখীল এলাকায় আমার বাড়ী। সেখানে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত মাত্র ২গন্ডা ভিটায় বসবাস করতে খুব কষ্ট হয় বলে প্রবাসে থাকতে এই জমিটি অনেক কষ্টের অর্জিত ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছিলাম। অনেক আশা ছিলো এখানে একটি গৃহ নির্মাণ করে শেষ বয়সে একটু আরামে থাকবো। কিন্তু মোতালেব সব আশা পানিতে ভাসিয়ে দিল। এই জায়গা ভোগ দখল করতে চাইলে মোতালেব অস্ত্রের হুমকি দেখায়। সন্ত্রাসী মোতালেব আমার এই জায়গা লুটপাট করে খেলেও আমি কিছুই করতে পারতেছি না।প্রশাসনের নিকট আমার অনুরোধ আমার জমি আমাকে নির্ভয়ে ভোগ দখলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
রুহুল আমিনের স্ত্রী বলেন, মোতালেব আমার আপন বোনের ছেলে অর্থাৎ ভাগিনা। এমন নিকটাত্মীয় হয়ে সে আমার জমি দখল করবে কখনো কল্পনাও করতে পারি নি। আমার স্বামীর প্রবাসে অর্জিত কষ্টের টাকা জমিয়ে ভবিষ্যতে সুখের আশায় জমিটি কিনেছিলাম। এই জমি ভোগ দখলে যদি প্রশাসন সহযোগিতা না করে তাহলে আমরা ভূমিমন্ত্রীর কাছে যাব।
রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল হক বলেন, আমার বাবার কষ্টের টাকায় খরিদ করা জমিতে আমরা থাকতে পারতেছি না। মোতালেব সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের ঘর ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে নতুন ঘর তৈরী করেছে। আমাদের প্রয়োজন তাই জমিটি খরিদ করেছিলাম, এখন সে জোর করে জমিটি দখল করে আমাদেরকে উচ্ছেদ করলো। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, কোন হাঙ্গামা চাই না। তাই মোতালেব যদি উচিত মূল্য দেয় তাহলে জমিটা আমরা তার নিকট বিক্রি করে দিব। জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। কিন্তু মোতালেব দিতে চায় সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু আমাদের সর্বনিন্ম দাবী ১০ লক্ষ টাকা।
এ ব্যাপারে মোতালেবের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা আমার খালু রুহুল আমিনের নিকট জায়গা বিক্রি করেছেন সেটা সত্য। কিন্তু এই জায়গাটি বিক্রি করেন নি। অন্য এলাকায় আমাদের আরো অনেক জমি রয়েছে তারা চাইলে সেখান থেকে দখল দিব। এই জমির মালিক আমি এবং আমার বোন। জায়গার চৌহদ্দি অনুযায়ী রুহুল আমিনই এই জায়গার মালিক এমন মন্তব্য করলে মোতালেব কোন উত্তর দিতে পারেন নি। রুহুল আমিন জায়গার মালিক না হলে ৫/৬ লক্ষ টাকা প্রদানের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কখনো কোথাও বলিনি ১ টাকাও দিব। আজিজ সাহেব সালিশী বৈঠকে ৫ লক্ষ টাকা দিতে বলেছেন আমি মানিনি। আমার জায়গা আমি কেন টাকা দিব? তার নামে এই জমির দলিল রয়েছে বলে দাবী করলেও দলিল দেখাতে পারবে কিনা জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন।
ঘটনার ব্যাপারে মোতালেবের ৮০ বছর বয়সী মা বলেন, মোতালেবকে আমি বলেছিলাম আমার বোন অর্থাৎ তার খালার সাথে ঝামেলা না করতে। কিন্তু আমার ছেলে আমার কথা শুনে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শের আলী বলেন, এই জমির বিরোধ নিয়ে আজিজ সাহেবের সাথে বৈঠক হয়েছিল বলে শুনেছি। থানায়ও অভিযোগ দিয়েছিলেন রুহুল আমীন। কিন্তু কোথাও আমাকে ডাকা হয়নি, তাই বিস্তারিত কিছু আমার জানা নেই।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ শফিউল কবীর বলেন, এই ধরণের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত নয়। ভুক্তভোগীরা পুনরায় আসলে তিনি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিবেন।