শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

বাঁশখালী থানাধীন ছনুয়া ৫নং ওয়ার্ডে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা এবং হামলার অভিযোগ

এম.জিয়াউল হক: চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানাধীন ১২ নং ছনুয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ওমেদ আলী মিয়াজী পাড়ায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা এবং হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেক সালিশ-বিচার করেও বিরোধ মীমাংসায় কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছেন না বলে জানা যায়।

বিরোধীয় দুই পক্ষের বাড়ীর পয়েন্ট

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওমেদ আলী মিয়াজী পাড়ার মুছা বাপের বাড়ীর লোকজন অর্থাৎ মো: আবুল হাশেম, মো: ছৈয়দ নূর, মো: সেলিম, মো: রিদোয়ান, মাষ্টার মো: ফোরকানুল হক, মো: ফারুক আজম এবং মো: হোছাইন গং এর সাথে নবী উদ্দিন বাপের বাড়ীর কামাল হোসেন, আক্তার হোসেন, নূরুল কাদের এবং জেবুন্নেছা গং এর দীর্ঘদিন ধরে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসতেছে। নবী উদ্দিন বাপের বাড়ীর মরহুম আব্দুর রহমান মৃত্যুর পূর্বে ভিটিভূমি ছাড়া (বি.এস ১০২২ নং খতিয়ানের ২৪৯৫ দাগের ৬২ শতক, বি.এস ১০২২ নং খতিয়ানের ২৫০২ দাগের ৩৪ শতক এবং বি.এস ১৭০ নং খতিয়ানের ২৫০২ দাগের ২০ শতক) সম্পূর্ণ জমি মুছা বাপের বাড়ীর লোকজনের নিকট বিক্রি করে নিঃশর্তবান হন। উক্ত জমিতে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে বসতবাড়ী নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আব্দুর রহমানের ওয়ারিশদের দাবী তিনি সম্পূর্ণ জমি বিক্রি করেন নি। এই বিষয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত বিভিন্ন চেয়ারম্যানকে অভিযোগ প্রদান করেন। সর্বশেষ ১২ নং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদকে এই ব্যাপারে অভিযোগ প্রদান করলে তিনি দলিল পর্যালোচনা করে মুছা বাপের বাড়ীর লোকজন কর্তৃক আব্দুর রহমানের নিকট থেকে জমি ক্রয়ের সত্যতা পেয়ে তাদের পক্ষে রায় প্রদান করেন এবং আব্দুর রহমানের ওয়ারিশদেরকে এই বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব -সংঘাত থেকে বিরত থাকতে বলেন।

এই সেই ভিটি যেটার উপর রাস্তা দাবী করা হয়

আব্দুর রহমানের ওয়ারিশরা বর্তমানে তাদের পুরাতন ভিটায় বসবাস করতেছেন। পূর্বে তাদের চলাচল ছিলো তাদের পূর্ব পুরুষ আব্দুর রহমানের জমির উপর দিয়ে। সেসব জমি আব্দুর রহমান কর্তৃক বিক্রি করার পর থেকে তাদের চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এখন তারা সেসব জমির উপর অর্থাৎ বর্তমান খরিদা মালিক মুছা বাপের বাড়ীর মো: ফারুক আজমের ভিটির ওপর দিয়ে অন্যায়ভাবে চলাচল রাস্তা করতে চায়। এই বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ এখন চরমে। আক্তার হোসেন গংকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী আবু তাহেরের ২ ছেলে মো: মনির উদ্দীন , মো: সালাহউদ্দিন এবং ভুয়া মেম্বার মো: হাবিবুল্লাহ ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রহমানের ওয়ারিশদের চলাচলের রাস্তা না থাকলেও তারা সমঝোতা কিংবা খরিদ করে রাস্তা নিতে চান না, তারা প্রতিপক্ষকে কৌশলে কোন মামলায় ফাঁসিয়ে চলাচল রাস্তা সৃষ্টি করতে চায়। স্থানীয়দের এই মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন স্বয়ং অত্র ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াসেক।

ছৈয়দ নূর গংকে ফাঁসাতে গত ৩০শে এপ্রিল নূরুল কাদেরের ছেলে ফরহাদকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে ৯৯৯ এ ফোন করেন আক্তার হোসেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পায়, ফরহাদ ঘরেই রয়েছে। তখন তারা পুলিশকে বলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহৃতকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি মিথ্যা বুঝতে পেরে পুলিশ তাদেরকে কঠোরভাবে হুশিয়ার করেন। এরপরে গত ১৮ই এপ্রিল ৯৯৯ এ ফোন করে ছৈয়দ নূর গং কর্তৃক মনির উদ্দীনের বাড়ীঘর ভাংচুর এবং লুটপাট করা হচ্ছে মর্মে জানায়। পুলিশ এসে কোন প্রকার সত্যতা পায়নি। এরপরেও বিভিন্ন জিনিসপত্র ও গরু বিক্রি করে বাড়ীতে রাখা নগদ ৬৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে মর্মে অভিযোগ দায়ের করে মনির উদ্দীন, বর্তমানে সেটা তদন্তাধীন। আক্তার হোসেন বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন সেটাও থানায় তদন্তাধীন। উল্লেখ্য মনির উদ্দীন ২০১৫ সালে ইয়াবাসহ বাকলিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হয়।

 

এছাড়া সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে গত ৫ই মে ‘বাঁশখালী টুডে’ নামক একটি অনলাইন টেলিভিশনে এবং দৈনিক আলোকিত বাঁশখালীসহ বিভিন্ন ফেসবুক পেজে “শতবর্ষী চলাচল রাস্তা বন্ধ করে পুকুর খনন” শিরোনামে সংবাদ প্রচার করিয়ে ছৈয়দ নূর গংকে কলংকিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

টিনের ছাউনী ও নির্মাণাধীন আব্দুল গণি জামে মসজিদ এবং তৎ সংলগ্ন সালাহউদ্দিন এর বাড়ী

মো: ছৈয়দ নূর বলেন, মরহুম আব্দুর রহমান মৃত্যুর পূর্বে উনার সমস্ত জমি বিক্রি করে দেন। উক্ত জমি আমরা চাচাতো-জেঠাতো ভাইয়েরা ক্রয় করে বসত-ভিটি নির্মাণ করি। কিন্তু তারা সেই জমির উপর অন্যায়ভাবে চলাচল রাস্তা দখল করতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আক্তার হোসেন গং কোনভাবে আমাদেরকে ফাঁসাতে না পেরে এখন সালাহউদ্দিন এবং মনির তাদের পক্ষ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। প্রশাসনের নিকট বিনীত অনুরোধ সুষ্ঠু তদন্ত করে এসব মিথ্যা মামলা থেকে আমাদের অব্যাহতি প্রদান করে মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক।

ছনুয়া কাদেরীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: ফোরকানুল হক বলেন, আক্তার হোসেন গং সব সময় মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদেরকে হয়রানি করতেছে। চেয়ারম্যানের কাছে তারা অভিযোগ দেয়,কিন্তু আমরা রায় পাওয়ার পরেও আমাদেরকে অন্যভাবে ফাঁসাতে চায়। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী নিয়ে বাড়ীর লোকজনের ওপর অনেকবার হামলা চালিয়েছে। আমদের চরিত্রে কোন দাগ নেই, তাই তারা আমাদেরকে কলংকিত করতে গত ৫ই মে একটি ইউটিউব চ্যানেলসহ বিভিন্ন ফেসবুক পেজে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করিয়েছে। আমি উক্ত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবাদে বলা হচ্ছে শত বছরের পুরাতন রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে, কিন্তু যেই রাস্তার কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ শীটের ২৫০২ দাগে তো কোন রাস্তা নেই। জরিপে রাস্তা না থাকলে রাস্তা কিভাবে বলা যায় ? এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তে তিনি প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন এবং এলাকাবাসীকে এসব সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান।

ফারুক আজম বলেন, আমি জমি ক্রয় করে বসত-ভিটি করেছি। আগে কোন একসময় লোকজন এই জমির উপর দিয়ে চলাচল করতো তাই বলে আমি আমার বাড়ীর মাঝখানে তাদেরকে রাস্তা করে দিব সেটা তো হয় না। যদি আমি ম্যাপ-শীটে থাকা কোন রাস্তা বন্ধ করতাম তাহলে একটা কথা ছিল। কারো চলাচল রাস্তা না থাকলে আমি তাদেরকে নিজের ক্ষতি করে রাস্তা দিতে বাধ্য নই। এছাড়া তারা তো রাস্তা নিয়ে আলোচনা করে না, তারা মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে অন্যায়ভাবে রাস্তা দখল করতে চায়। এই বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান -মেম্বার অবগত রয়েছেন। প্রশাসনের নিকট অনুরোধ এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক।

চলাচল রাস্তা দাবীকৃত শীটের ২৫০২ দাগ যেখানে রাস্তার কোন ম্যাপ নেই

মো: হোছাইন সওদাগর বলেন, আমাদের বাড়ীর আবদুল গণি জামে মসজিদ প্রায় ৩ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমরা বাড়ীর সবাই এই মসজিদে নামাজ আদায় করি। কিন্তু সালাহউদ্দিন গংকে এই মসজিদে চলাচলে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে বলে যেই সংবাদ প্রচার করা হয়ে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন মসজিদ তো তাদের বাড়ীর সাথে লাগানো, তাহলে চলাচলে বাঁধা দেওয়ার সুযোগ কোথায়? তারা সবসময় মিথ্যা অভিযোগ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন বাড়ী ভাংচুর করে লুটপাট করা হয়েছে বলে মনির উদ্দীন থানার অভিযোগে বলেছেন গরু বিক্রির ৬৫ হাজার টাকা ছিনতাই হয়েছে। তারা তো কখনো গরুও পালন করেন নি। তাহলে গরু বিক্রির টাকা কোথায় থেকে আসবে? এভাবে তারা মিথ্যা অভিযোগ এবং হামলা করে আমাদের জীবন দূর্বিসহ করে তুলতেছে। আমরা এসব থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।

সালাহউদ্দিন বলেন, আক্তার হোসেন গংকে আমরা সহযোগীতা করার অভিযোগ মিথ্যা। ছৈয়দ নূর গং এর সাথে আমাদের পূর্বে কোন বিরোধ ছিলো না। বর্তমানে যেসব বিরোধ চলমান রয়েছে সেগুলো সামাজিকভাবে সমাধান হলেও মেনে নিতে রাজি আছি।

আব্দুর রহমানের নাতনী জেবুন্নেছা উচ্চস্বরে বলেন, আমার নানা আগে এই পথ দিয়ে চলাচল করতেন। সুতরাং এখনো আমাদেরকে ফারুকের বাড়ীর উপর দিয়ে চলাচল রাস্তা করে দিতে হবে। এটা আমাদের দাবী।

অত্র ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াসেক বলেন, আক্তার হোসেন গংকে সমাধানের জন্য অনেকবার বৈঠকে ডাকা হয়েছে, কিন্তু তারা আসে না। চলাচল রাস্তা নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা উল্টো বলেছিল রাস্তা না পেলে হেলিকপ্টার নিয়ে চলাচল করবে, তবুও আলোচনায় আসবে না। তারা গায়ের জোর খাটাতে চায়। এভাবে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাদের চলাচল রাস্তা না থাকলে একটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

স্থানীয় চৌকিদাররা বলেন, ২৫ বছর ধরে এই এলাকায় চৌকিদারী করতেছি। তাদের দাবীকৃত রাস্তাটি আমরা কখনো দেখিনি। আক্তার হোসেন গংদের বারবার অভিযোগ নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবও বিরক্ত হয়েছেন।

এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জানান, দীর্ঘদিন যাবত এই দুই পক্ষের বিরোধ চলমান। এসব বিশৃঙ্খলা থেকে বাঁচতে দুই পক্ষকে সমঝোতায় বসা উচিত।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print