
প্রভাতী ডেস্ক : মিয়ানমারে ছায়া সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি ঢাকায় ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। ছায়া সরকার ক্ষমতায় গেলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) হঠাৎ এক বিবৃতি দিয়ে বিরোধী গ্রুপটি এ কথা জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি এটাও বলেছে যে, তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে। ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট নামের ছায়া সরকার সামরিক জান্তা হটানোর আন্দোলনের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পুরো বিষয়টির প্রতি ঢাকার পর্যবেক্ষকদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। সামরিক জান্তা হটানোর আন্দোলনে পশ্চিমাদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে এটা কোনো স্টান্টবাজি কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিকে বেসামরিক ছায়া সরকারের নেত্রী বলে অভিহিত করা হয়েছে। যদিও সু চি ক্ষমতায় থাকাকালে রোহিঙ্গাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি প্রকাশ করেননি।
তার গঠিত কফি আনান কমিশনের সুপারিশে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সু চির সরকার তার কিছুই করেনি। বরং সু চি সংখ্যালঘূ জাতিগোষ্ঠীর প্যাংলং সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করেননি। এখন হঠাৎ করে তাদের অবস্থানের এতটা পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ছায়া সরকারে সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে সু চি এই সরকারের সঙ্গে আছেন কি না, তা আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সেনাবাহিনী ও সু চি উভয়ে কট্টরপন্থি বৌদ্ধধর্মীয় নেতাদের নিয়ে সরকার পরিচালনা করেছেন।
বৌদ্ধ ধর্মের এসব নেতা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঘৃণার সংস্কৃতি প্রচারও করেছেন। এ কারণে মিয়ানমারে সামরিক কিংবা বেসামরিক কোনো সরকারই ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার করে না। তারা ‘রাখাইন মুসলমান’ নামে রোহিঙ্গাদের অভিহিত করে থাকে। কিন্তু ছায়া সরকারের এবারের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ছায়া সরকারের এসব বিষয়ের প্রতি মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার সম্প্রদায়ের প্রভাববলয়ে থাকা বৌদ্ধ নেতারা আদৌ সমর্থন দিচ্ছেন কি না-এসবের প্রতি ঢাকার নজর থাকবে।
রোহিঙ্গাদের প্রতি সুচি’র সরকার কোনো ধরনের সহানুভূতি না দেখানোর কারণে গণতন্ত্রপন্থি এই নেত্রীর প্রতি পশ্চিমারা নাখোশ হয়েছিল। ফলে সু চির প্রতি পশ্চিমাদের এবারের সমর্থন আগের মতো জোরালো নয়। পশ্চিমারা অন্ধভাবে সু চিকে সমর্থন দিয়ে আবার ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না। পশ্চিমারা নিশ্চিত হতে চায় যে, রোহিঙ্গাদের প্রতি সু চি নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে তাদের অধিকার নিশ্চিত করবেন কি না। তাছাড়া প্রতিশ্রুতি দিয়েও ওয়াদাভঙ্গের অভিযোগ সু চির বিরুদ্ধে রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানোর প্রতি অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে বর্তমান জান্তা সরকারের সঙ্গেও বাংলাদেশ আলোচনায় আগ্রহী। জান্তার সঙ্গে চীনের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ তাই চীনের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরু করার কথা বললেও চীন বলছে, এখনই আলোচনা করার অবস্থা মিয়ানমারে নেই।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বেসামরিক সরকারকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। ফলে তার মেয়াদ শেষ হলে সু চির সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে তার পক্ষে না-ও থাকতে পারে। এমন কারণে সিভিল-মিলিটারি দূরত্ব বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা দখল করে সু চিকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন জেনারেল মিন। এরপর থেকে জান্তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে আন্দোলন চলছে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। অনেকটা গৃহযুদ্ধে রূপ নিচ্ছে সংঘাত। যদিও পশ্চিমারা বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছে; কিন্তু সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর চাপ প্রয়োগ করছে না।
জান্তাবিরোধী আন্দোলনের প্রতি পশ্চিমাদের জোরালো সমর্থন আদায়ে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে ছায়া সরকার। কিন্তু পশ্চিমারা চায়, শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার সম্প্রদায় নিয়ে নয়; বরং রোহিঙ্গাসহ ১৪০ সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ।