সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

গতানুগতিক বাজেট দিয়ে সরকার সাধারণ মানুষের প্রতি অবিচার করেছে : বিএনপি

প্রভাতী ডেস্ক : গতানুগতিক বাজেট দিয়ে সরকার সাধারণ মানুষের প্রতি অবিচার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। বৃহস্পতিবার(৩ জুন) রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দরিদ্র, হতদরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পে যুক্ত দেশের ৫-৬ কোটি মানুষের বিষয়ে নতুন কিছু নেই। এটি ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটালেও সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে না। স্বজনপ্রীতি ও স্বজন তোষণের বাজেট দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যারা হতদরিদ্র, দরিদ্র, দিনে আনে দিনে খান, অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করেন, যারা রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়ি ওয়ালা, যারা খাবার বিক্রি করেন, চা দোকানদার তারা তো অসহায় হয়ে পড়েছেন।

তাদের জন্য প্রণোদনা বা ক্যাশ ট্রান্সফারের সুযোগ রাখা হয়নি। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে তাদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এ বাজেট স্বজনপ্রীতি ও স্বজন তোষণের বাজেট। এর মাধ্যমে এক শ্রেণীর লোকের ব্যাংক ব্যালেন্স আরো বড় হবে। তিনি বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে এক শতাংশ মানুষের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য কোনো অর্থনীতি হতে পারে না।

দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পদ এক শতাংশ লোকের কাছে চলে গেছে। অর্থাৎ বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ ক্রমান্বয়ে গরিব থেকে আরো গরিব হচ্ছে। ইতোমধ্যে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এ সংখ্যা যারা আগে দরিদ্র ছিল তাদের বাদ দিয়ে। তাদের যোগ করা হলে পাঁচ – ছয় কোটি লোক দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছে গেছে। তাদের বরাদ্দ না দিয়ে তারা মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ দিচ্ছে।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার যে সহায়তা দিয়েছে তাকে ‘লোক দেখানো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঁচ থেকে ছয় কোটি মানুষের জন্য মাথাপিছু ১০০-২০০ টাকাও পড়বে না। অথচ আমরা বিএনপি থেকে বলেছি প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা ক্যাশ ট্রান্সফার করার কথা। সব গণতান্ত্রিক দেশে তাই করছে। কারণ তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি। এ সরকার তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তাই জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি হওয়ার তো কারণ নেই।

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম প্রণোদনা দিয়েছে দাবি করে আমীর খসরু বলেন, স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশের উপরে বরাদ্দ রাখা উচিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চাইলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকার কথা।

কিন্তু তা দেখছি না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পদ্মা সেতুতে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে তো এসবের প্রয়োজন নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে এমন একটি বাজেট উপহার দিয়েছে যা হলো একটি ‘অধমর্ণের বাজেট’।

মোট বাজেটের ৩৫.৫৬ শতাংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশের বেশিই হলো ঘাটতি। যা বৈদেশিক অথবা অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকে ঋণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি অতীতে এদেশকে বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা থেকে বারবার বের করে আনার চেষ্টা করেছে আর আওয়ামী লীগ তাদের বিশৃঙ্খল মেগা প্রকল্প ও মেগা দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতিকে বারবার বৈদেশিকনির্ভর করে দেশের প্রতিটি শিশুর মাথায় জন্মের আগেই হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এবারের বাজেট তারই চরম বহিঃপ্রকাশ।

জনগণের নয় সরকারের মদদপুষ্টদের উন্নয়ন হচ্ছে -মির্জা ফখরুল : সাধারণ মানুষের নয়, এখন সরকারের মদদপুষ্টদের উন্নয়ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আসুন আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্ভয়ে কাজ করি। অবশ্যই আমরা এ লড়াইয়ে সফল হবো। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের আগে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন করছে। কিন্তু কোন উন্নয়ন, কাদের উন্নয়ন? এই উন্নয়নে শুধু তাদেরই পকেট বোঝাই হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছে। এই বাজেট নিয়ে পত্রপত্রিকায় যেটা দেখলাম, সেখানে পরিষ্কারভাবে দেখতে পারছি, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোনো জায়গা নেই।

বিরোধী দলের ওপর সরকারের এক দশকের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করায় আমাদের দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ৫শর ওপরে নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। হাজারো নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে জাতিকে মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print