
প্রভাতী ডেস্ক : দেশের করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী ১৩ জুন থেকে সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না থাকে, তাহলে ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পর প্রথমে যারা ২০২১ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে, তারা সপ্তাহে ছয় দিনই ক্লাস করবে। যারা ২০২২ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি দেবে, তাদেরও সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করব। তবে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রথমে সপ্তাহে ১ দিন করে ক্লাস করবে। এর পর ক্রমাগত বাড়িয়ে দুই, তিন, চার দিন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে পূর্ণাঙ্গভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বিষয়টি টিকার ওপর খানিকটা নির্ভর করছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে চাওয়া হয়েছে। তবে ধরে নেওয়া যায়, যেহেতু শিক্ষার্থীদের বয়স ৪০-এর নিচে, তাই অধিকাংশই হয়তো টিকা নিতে পারেননি। তবে টিকা দেওয়া ছাড়াও আর কী বিকল্প উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যায়, সেটা ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তবে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মে মাসেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আবাসিক হল খোলায় বেশ চ্যালেঞ্জ আছে। এজন্য আমরা টিকা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছি। আমরা নতুন যে টিকা পাচ্ছি, তাতে আবাসিক এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জানিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরাও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আগামী ১৩ই জুন থেকে সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। শুধু পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন স্কুলে আনা হবে। আর প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রথম দিকে সপ্তাহে একদিন আসবে।’
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকার কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর পরিকল্পনা করলেও মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়াতে হয়েছে। এর আগে ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আর ১৭ মে থেকে আবাসিক হল ও ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ছিল। তবে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বাড়ায় সর্বশেষ ২৯ মে পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা আছে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস নেওয়ার দুই সপ্তাহ পরে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ক্লাস শুরুর পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে। এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১৫০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ১৮০ দিন ক্লাস করানোর জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব শিক্ষার্থীর জন্য আগামী জুন থেকে সপ্তাহে দুটি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে।
জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকলে সেদিকে আমরা যাব। তা না হলে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করব।’
দেশের কোথাও আলাদাভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো পরিকল্পনা নেই জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও বন্ধ রাখা, কোথাও খুলে দেওয়া- এটার কথাও বলছেন অনেকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোথাও খুলব, কোথাও খুলব না; সে ক্ষেত্রে অসাম্য আরো বেশি তৈরি হবে।’
নতুন পাঠক্রমের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর থেকে নতুন কারিকুলামের (পাঠক্রম) বইয়ের পাইলটিং হবে। ২০২৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন কারিকুলাম চালু হবে।’
দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির বিষয়টি আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে চিন্তা করি। সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে বিশেষজ্ঞরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলেছেন। সে কারণে সব বিষয় বিবেচনা করেই ১২ জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সবাই দায়িত্বশীল হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম।