
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পাঁচ বছর আগের এই ঘটনার মামলায় মঙ্গলবার(১১ মে) চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (বাবুল আক্তার) আগেও এসেছিলেন। আজকেও (মঙ্গলবার) পিবিআইতে গেছেন। মামলার বাদী হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাকে হেফাজতে রাখা হয়েছে।’
তবে সংস্থাটির আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাবুল আক্তারকে কার্যত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার বাদীকে সরাসরি গ্রেপ্তার করা যায় না। তাকে আগামীকাল বুধবার আদালতে হাজির করে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হবে। আদালতের মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’
এর আগে বিকেলে পিবিআইয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রামে হাজির হয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, ‘উনি (বাবুল আক্তার) মামলার বাদী। আমরা যেহেতু মামলা তদন্ত করছি, উনি অগ্রগতি জানতে আমাদের কাছে এসেছিলেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ই জুন সকালে চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এ ঘটনায় তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সন্দেহভাজন হিসেবে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যাকান্ডে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আটক হন এহতেশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনির। গ্রেপ্তার আনোয়ার ও মোতালেব মিতু হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে এ হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত মুছার নাম আসে। মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন এ হত্যায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন। ২০১৭ সালের ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সরবরাহের অভিযোগে ওই বছর ১ জুলাই মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু ও শাহজাহান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ৫ জুলাই ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মিঠাছড়িতে নুরুল ইসলাম রাশেদ ও নুরুন্নবী নামে দুজন পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। একপর্যায়ে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ১লা নভেম্বর ঢাকার বেসরকারি আদ-দ্বীন হাসপাতালে সহযোগী পরিচালক হিসেবে বাবুল আক্তার যোগদান করেন। এদিকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এর আগে সেটি সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করেছিল।