
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রিটিশ রানী ২য় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। শুক্রবার (৯ই জুলাই) উইন্ডসর ক্যাসেলে মারা যান তিনি। ওই দিনই বাকিংহাম প্যালেস থেকে তার মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে তিনি কোনো রাজা বা রানীর সবচেয়ে দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী ছিলেন।
পরিবারে রাণী, ৪ সন্তান এবং ১০ জন নাতি-নাতনিকে রেখে গেলেন তিনি।
এদিকে প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, বর্তমান ও সাবেক বিশ্বনেতারা এবং বিভিন্ন দেশের রাজপরিবারের সদস্যরা শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
গতকাল বাকিংহাম প্যালেস থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মহামান্য রানী খুবই দুঃখের সঙ্গে তার প্রিয় স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ডিউক অব এডিনবরার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেছেন। তিনি আজ সকালে উইন্ডসর ক্যাসেলে শান্তির সঙ্গে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’
অসুস্থ বোধ করায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৯৯ বছরের প্রিন্স ফিলিপকে কিং এডওয়ার্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখনই বলা হয়েছিল, তিনি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত নন। হৃদযন্ত্র পরীক্ষার জন্য পরে তাকে আরেকটি হাসপাতালে ৭ দিন রাখা হয়। সেখানে সফলভাবে তার হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা ও চিকিৎসা হয় বলে জানিয়েছিল বিবিসি। দীর্ঘ প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর গত মাসের মাঝামাঝিতে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন প্রিন্স ফিলিপ।
ডিউক অব এডিনবরার জন্ম গ্রিসের রাজপরিবারে ১৯২১ সালের ১০ জুন। গ্রিসের করফু দ্বীপ যেখানে তার জন্ম, সেখানে তার জন্মসনদে অবশ্য তারিখ নথিভুক্ত আছে ২৮ মে ১৯২১। এর কারণ গ্রিস তখনো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করেনি। তার পিতা ছিলেন গ্রিসের প্রিন্স অ্যান্ড্রু আর মা ব্যাটেনবার্গের প্রিন্সেস অ্যালিস।
ফিলিপ ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও জার্মানিতে লেখাপড়া করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সামরিক বাহিনীতে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং চাকরি নেন রয়্যাল নেভিতে। ১৯৪৭ সালে প্রিন্সেস দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার প্রায় পাঁচ বছর পর রানী হন এলিজাবেথ।
তরুণদের উন্নতি ও বিকাশের বিষয়ে তিনি বরাবর খুবই সচেতন ছিলেন। এই আগ্রহ থেকে ১৯৫৬ সালে তিনি ব্যাপকভাবে সফল একটি উদ্যোগ চালু করেন ডিউক অব এডিনবরা অ্যাওয়ার্ড নামে। এই উদ্যোগে লাভবান হয়েছে বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী প্রায় ৬০ লাখ সক্ষম ও প্রতিবন্ধী তরুণ। ডিউক পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মতো বিষয়ে খুবই উৎসাহী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিউক অব এডিনবরার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রিন্স ফিলিপের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত রাজপরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তার বার্তায় বলেছেন, ডিউক অব এডিনবরা এক দীর্ঘ ও অনন্য জীবনযাপন করেছেন এবং নিজেকে তিনি নানা মহৎ কাজ ও অন্যদের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।
কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নেতারাও তাদের বার্তায় প্রিন্স ফিলিপের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বার্তায় প্রিন্স ফিলিপ সামরিক বাহিনীতে এবং জনসেবামূলক কাজে যে অবদান রেখেছেন তার প্রশংসা করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ডিউক অব এডিনবরাকে ‘একজন মহান নিষ্ঠাবান ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, ‘তিনি এমন একটি প্রজন্মকে ধারণ করেছিলেন যা আমরা আর কখনই দেখতে পাব না।’
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন তার দেশের জনগণের পক্ষ থেকে রানী এলিজাবেথ ও রাজপরিবারের সবার প্রতি শোক ও সহমর্মিতা জানান।
প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ শোক প্রকাশ করেছেন। নেদারল্যান্ডসের রাজপরিবার এক বার্তায় বলেছে, প্রিন্স ফিলিপ তার দীর্ঘ জীবন ব্রিটিশ জনগণের সেবার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং তার প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বের ছাপ কখনো ভোলার নয়। সুইডেনের রাজা কার্ল গুস্তাফ বলেছেন, ডিউক অব এডিনবরা ছিলেন সুইডিশ রাজপরিবারের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং এ সম্পর্ককে তারা অত্যন্ত মূল্যবান মনে করেন।
মাল্টার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট আবেলা প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘তিনি মাল্টাকে তার নিজের বাড়ির মতো দেখতেন এবং প্রায়ই এখানে আসতেন। আমাদের জনগণ তার স্মৃতিকে সবসময়ই সমুজ্জ্বল রাখবে।’
ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক থেকেও শোকবার্তা এসেছে।