
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৭ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) ভোর সোয়া ৫ টায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলেসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, গোলাম হায়দার মিন্টু পাঁচ দিন আগে মেরুদণ্ডসহ শারীরিক নানা জটিলতার কারণে ঢাকায় ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। বিকালে তার মরদেহ চকবাজার জয়নগরের বাড়িতে আনা হবে। এশার নামাজের পর প্যারেড কর্নারে জানাজা হবে। এরপর হজরত মোল্লা মিছকিন শাহের (র.) দরগাহ কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলনকক্ষে প্যানেল মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাউন্সিলর গোলাম হায়দারের মৃত্যুতে এই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ও জহর লাল হাজারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু নগরীর ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে টানা ৭বার নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন। ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন তারা।
নজীর সৃষ্টিকারী কাউন্সিলর: চট্টগ্রাম সিটির ভোটে কাউন্সিলর পদে কারো দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়ার ঘটনা আছে। তবে বন্দরনগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ জনপ্রতিনিধি এবারসহ টানা ৭বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে পূর্ণ করলেন ‘লাকি সেভেন’। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এ এক অনন্য নজির।
সিটি করপোরেশনের ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে থাকা চার প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন ৭১ বয়সী মিন্টু। তিনি পেয়েছিলেন দুই হাজার ৭৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেলোয়ার হোসেন পেয়েছিলেন মাত্র ৭৪৭ ভোট।
১৯৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন নির্লোভ ও সাদামাটা জীবনযাপন করা সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। কোনোবারই তাকে কেউ হারাতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করায় সেই নির্বাচনে কেবল অংশ নেননি তিনি। কিন্তু পরবর্তী সবক’টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে অংশ নিয়ে প্রতিবারই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুরোধে ৪৮ বছর বয়সে সংসারজীবন শুরু করলেও চকবাজারের মানুষই তার কাছে সত্যিকারের সংসার, পরিবার। সপ্তমবারের মতো নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি সহজসরল জীবনযাপন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি নিরামিষভোজী। নেই বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি। আছে কয়েকটি দোকানঘর। সেগুলোর ভাড়া দিয়ে চলেন।
সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমেই তার কর্মজীবনের শুরু। সিটি করপোরেশন প্রদত্ত কাউন্সিলর ভাতা দিয়েই তিনি তার দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করেন। ছাত্রজীবন থেকে বামপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে যুক্ত হন সমাজসেবায়। স্বল্পাহারী ও মিষ্টভাষী এই জনপ্রতিনিধির একটি বড় গুণ, তিনি সহজেই সমাজের সব স্তরে মিশে যেতে পারেন। এলাকার সবার কাছে ‘মিন্টু ভাই’ নামে পরিচিত তিনি।