সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

সিনহা হত্যা : মামলার এজাহারে যা রয়েছে

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় কক্সবাজারের আদালতে বুধবার (৫ই আগষ্ট) একটি মামলা হয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় ওই পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।

আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ ফৌজদারি দরখাস্তটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে নির্দেশ প্রদান করেন। সেই সঙ্গে বিচারক হত্যা মামলাটি তদন্তের জন্য র‌্যাব-১৫ কে দায়িত্ব দিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।

মামলটির বাদী নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন যে, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করেছেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ কুমার দাস ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই তখনো জীবিত থাকা মেজর সিনহাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার শরীরে লাথি মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে গাড়িতে তুলে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে গত ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা মো. রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার আসছিলেন। এ সময় তিনি টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজার সংলগ্ন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পৌঁছালে ১ নম্বর আসামি লিয়াকত ও ৩ নম্বর আসামি এসআই নন্দ দুলাল গাড়ির গতিরোধ করেন। এসময় মেজর সিনহা নিজের পরিচয় দেন। এরপরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামেরাম্যান সিফাতকে টানা হেঁচড়া করে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এসময় সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়িতে বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেন। পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে পরিদর্শক লিয়াকত হুঙ্কার ছেড়ে বলেন- ‘তোর মতো অনেক মেজর দেখছি’ বলে সিনহাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলেন। পর মুহুর্তে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যান। এসময় মেজর সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেন।

এমনকি মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পরিদর্শক লিয়াকত আরো এক রাউন্ড গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দরখাস্তে আরও বলা হয়, সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য ইয়াবা, গাঁজা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আদালত থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশনা মতে পরিদর্শক লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় পা দিয়ে লাথি মেরে তার মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করে। এসময় অন্যান্য আসামিরা তাদের সহযোগিতা করে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print