শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

শিপ্রার ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে : দুই এসপির বিরুদ্ধে করা রিট খারিজ

প্রভাতী ডেস্ক : শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে উপস্থাপন করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে দুই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে করা রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (২০শে আগষ্ট) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গতকাল শুনানি শেষে আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়।

রিটের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোজ কুমার ভৌমিক ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।

পুলিশের যে দুই কর্মকর্তার কথা রিটে উল্লেখ করা হয় তাঁরা হলেন- সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান শেলী।

গতকালের শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক আদালতকে বলেন, থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশকে স্যার বলতে হয়। নইলে থানা থেকে বের করে দেয়। তাদেরকে কেন স্যার বলতে হবে? তারা তো জনগণের চাকর। আদালত বলেন, এটা হতে পারে না। অন্যায় যেই করুক তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।

এ সময় রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, শিপ্রা আসতে পারতো, আপনি কেন? আইনজীবী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আমি আসতে পারি। আর আপনাদেরও শুনার অধিকার রয়েছে। শিপ্রার মা-বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

মনোজ কুমার বলেন, শিপ্রা জামিনে মুক্তি পেলেও নানা ঝামেলায় রয়েছে। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আদালত বলেন, আমরা দেখছি সে টেলিভিশনে বক্তব্য দিচ্ছে। তাহলে এখানে আসতে পারে না? সেটার অবস্থান সম্পর্কে আমাদের জানাবেন।

পরে বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক রিটটি দায়ের করেন। রিটে দুই পুলিশ কর্মকর্তার ফেসবুক পোস্টের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।

রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান, পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকসহ (ডিআইজি) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। একটি জাতীয় ইংরেজি পত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।

শিপ্রার ছোট ভাই শুভজিৎ কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাসহ কতিপয় লোক তাঁর বোনের ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের মন্তব্য নোংরা মানসিকতা থেকে আসতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

শুভজিৎ আরো বলেন, ‘ঘটনার সময় পুলিশ তাদের সব ডিভাইস জব্দ করেছে। সেসব ডিভাইস থেকে কোনো কিছু ফাঁস হয়েছে কি না, সেটা নিয়েও আমাদের সন্দেহ রয়েছে।’

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা যে নীলিমা বিচ রিসোর্টে ছিলেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নূরকে আটক করে। পরে তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। শিপ্রা দেবনাথকে রামু থানায় করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। আর সিফাতকে টেকনাফ থানায় করা হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার দুটি মামলা ও রামু থানায় করা মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাঁদের নিয়ে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন।

৯ই আগস্ট শিপ্রা ও ১০ আগস্ট সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের আদালত। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

গত ১৮ আগস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে শিপ্রা দেবনাথ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর রাতে এসে আমাদের কটেজ থেকে পুলিশ দুটি মনিটর, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ক্যামেরা, লেন্স, তিনটি হার্ডড্রাইভ এবং আমাদের ফোনসহ সব ডিভাইস নিয়ে যায়। জব্দ তালিকায় যার কোনোটির কোনো উল্লেখ নেই। আমি জানি না, এখন কীভাবে বা কার কাছে সেসব ফেরত চাইব।’

শিপ্রা আরো বলেন, ‘আমাদের পারসোনাল প্রোফাইল ও ডিভাইস থেকে বিভিন্ন ছবি চুরি করে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাই ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন। আমার নামে খোলা হয়েছে ভুয়া ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম আইডি। আমার ব্যক্তিজীবনকে যাঁরা অসহনীয় করে তুলেছেন বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরির মাধ্যমে, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেব, কথা দিলাম।’

এরপর ফেসবুকে শ্রিপার ব্যক্তিগত ছবি পোস্টকারী দুই এসপিসহ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নেন শ্রিপা। গত মঙ্গলবার রাতে অভিযোগ নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় যান শিপ্রা, তাঁর আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু ও সিফাত। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুজ্জামান রামু থানা বা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মামলাটি ফিরিয়ে দেন।

এরপর গতকাল বুধবার দুপুরে মামলা করতে রামু থানার কাছাকাছি গিয়েও ফিরে আসেন শিপ্রা ও তাঁর আইনজীবী। এর কারণ প্রসঙ্গে আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু জানান, উচ্চ আদালত শিপ্রার পক্ষে দায়ের করা রিটের আদেশ দিতে পারেন বৃহস্পতিবার। সেই আদেশ কী আসে, তা জানার জন্য মামলার নথি রামু থানায় জমা না করে আবার কক্সবাজার ফিরে এসেছেন তাঁরা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print