
প্রভাতী ডেস্ক : সিনহা হত্যার মামলা তদন্তে প্রতিনিয়ত নতুন মোড় দেখা যাচ্ছে। অবশেষে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন, টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার ও বাহারছড়া পুলিশের তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় খলনায়ক ইলিয়াস কোবরাসহ ৯১ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ তথা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৩০ দিনের জন্য ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছে। ৯১ জনের মধ্যে বেশীরভাগই সিনহা হত্যা মামলার সাথে সম্পৃক।।
সোমবার (১৭ই আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বিএফআইইউ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
একই সঙ্গে চিঠি ইস্যু করার দিন থেকে ৩ দিনের মধ্যে স্থগিত করা হিসাবগুলোর নাম, নম্বর, স্থিতি এ সংক্রান্ত তথ্যাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম, হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী) পাঠাতেও বলা হয়েছে।
১টি চিঠিতে যে ৮ জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও তথ্য চাওয়া হয়েছে, তারা হলেন- এ বি এম মাসুদ হোসেন, প্রদীপ কুমার দাশ, চুমকী কারান, প্রতীম কুমার দাশ, প্রতুশ কুমার দাশ, মো. লিয়াকত আলী, দিলীপ ও ইলিয়াস কোবরা।
অপর একটি চিঠিতে আরো ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। তারা হলেন- প্রশান্ত কুমার হালদার, আশুতোষ চৌধুরী, উৎপল মজুমদার, বাসুদেব ভট্টাচার্য, পাপিয়া ভট্টাচার্য, প্রিতিশ কুমার হালদার, প্রশান্ত দেউরি, অমিতাভ অধিকারী, পূর্ণিমা রানী হালদার, রাজিব সোম, শিমু রায়, রতন কুমার বিশ্বাস, অনিতা কর, উজ্জল মল্লিক, অনঙ্গ মোহন রায়, সোমা ঘোষ, অমল চন্দ্র দাস, সুদেব কুমার ভৌমিক, সঞ্জীব কুমার হালদার, সুব্রত দাশ, শুভ্রা রানী ঘোষ, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অতশী মৃধা, সুস্মিতা সাহা, গোপাল চন্দ্র গাঙ্গলী, রাম প্রসাদ রায়, শঙ্খ ব্যাপারী, অভিজিত অধিকারী, সুকুমার সাহা, অনিন্দিতা মৃধা, রাম প্রসাদ, মিলন কুমার দাশ, অমল কৃষ দাস, অরুন কুমার কুণ্ড, লীলাবতী হালদার, অবন্তিকা বড়াল, মোহাম্মদ আবু রাজিব মারুফ, ইরফান উদ্দিন আহমেদ, শাহনাজ বেগম, জামিল মাহমুদ, ইমাম হোসেন, একেএম শহীদ রেজা, শওকত রেজা, জোবেদা বেগম, নাহিদা রেজা, একেএম হারুন অর রশিদ, একেএম মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, মো. শাহাদাত হোসেন, জামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, মশিউর রহমান, সাব্বির আহমেদ, মো. মনিরুল ইসলাম, আসমা সিদ্দিক, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সোলায়মান চৌধুরী, মো. কামরুজ্জামান, মো. ইকবাল সাইদ, রেজাউর রহমান, মিজানুর রহমান, মিসেস সৈয়দা রুহি গজনভী, এম নুরুল আলম, মো. নওশের-উল-আলম, মমতাজ বেগম, আফরোজা সুরাইয়া মজুমদার, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, কাজী মমরেজ মাহমুদ, ওমর শরীফ, মোস্তাইন বিল্লাহ, শাহ আলম শেখ, শেখ মাইনুল ইসলাম মিঠু, তোফাজ্জল হোসেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মাহফুজ রহমান বেবী, ইনসান আলী শেখ, হাফিজা খানম, এনএম পারভেজ চৌধুরী, মো. রেজাউল করিম এবং ইরফান আহমেদ খান।
হিসাবগুলোকে লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ক্ষমতাবলে ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে প্রত্যেকের নামের পাশে জন্ম তারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব.) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৫ই আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ,টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক। মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে র্যাবকে।