
প্রভাতী ডেস্ক : সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসাহীনতায় মৃত্যু ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’কে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে বলেছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে কোনো হাসপাতাল রোগী না নিলে কিংবা চিকিৎসাজনিত অবহেলায় কারো মৃত্যু হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার(১৫ই জুন) এ আদেশ দেয়। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অধিগ্রহণ, হাসপাতালে শয্যার তথ্য জানতে ‘সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো’ স্থাপন, ৫০ বা এর বেশি শয্যার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও সাধারণ রোগীদের জন্য পৃথক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা এবং ঢাকায় দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে করা পৃথক তিনটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এক সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বেশ কিছু নির্দেশনা, অভিমত ও আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
ভিডিও কনফারেন্সে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, ইয়াদিয়া জামান, এ এম জামিউল হক ফয়সাল ও মেহেদী হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ দেশ সাংবাদিকদের জানান, ঢাকায় লকডাউনের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছে, ইতোমধ্যে সরকার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সংগত হবে না।
রিটকারী আইনজীবীরা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক যেন অযৌক্তিক ও মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে না পারে সে জন্য নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলেছে হাইকোর্ট। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জরুরি মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও তা বিক্রির বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে বলা হয়েছে আদেশে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা ও রি-ফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য বিক্রেতাদের প্রতিষ্ঠানে কিংবা দোকানে প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি হাইকোর্টের অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রি বন্ধের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে।
অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান বলেন, হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, আইসিইউ হটলাইন নামে একটি কেন্দ্রীয় ও পৃথক হটলাইন চালু করতে হবে যাতে ভুক্তভোগীরা সহজেই যোগাযোগ করতে পারেন। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে।
আইনজীবীরা আরো জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ গত ১১ মে এক আদেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে সাধারণ (নন-কভিড) রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে নির্দেশনা জারি করে। এছাড়া ৫০ বা তার বেশি শয্যা বিশিষ্ট সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২৪ মে আরো একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের এসব নির্দেশনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বলেছে, নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না তা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রতিবেদন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। একই সঙ্গে এসব নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া ৫০ বা এর বেশি শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো গতকাল সোমবার পর্যন্ত কত সংখ্যক করোনাভাইরাস আক্রান্ত এবং সাধারণ রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।