সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ !

আজ ৩০শে মে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনের দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সেই থেকেই তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি  দিবসটিকে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিবছরই দিবসটি উপলক্ষে তাঁর মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন, ফাতেহা পাঠ, দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, থাকে কয়েকদিন ব্যাপী কর্মসূচি। এতে জিয়াউর রহমানের কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবনের নানা দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শহীদ জিয়ার সহচরসহ দলের সিনিয়র নেতারা।

তবে এবার এই দিবসটি এসেছে একটি ভিন্ন পেক্ষাপটে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এখন প্রাণঘাতি বৈশ্বিক মহামারী  করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এ বছরে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও এসেছে পরিবর্তন। অন্যান্য বছর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শাহাদাতবার্ষিকী পালন করা হলেও এবার কোনো সমাবেশ বা বড় পরিসরে অনুষ্ঠান থাকছে না। অনলাইনে চলবে ভার্চুয়াল আলোচনা।

প্রতিবছর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় রান্না করা খাবার বিতরণ করা হতো। এবার রান্না করা খাবারের পরিবর্তে দুঃস্থ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র বিতরণ ও আর্থিক সহযোগিতা করবে  বিএনপি। বেগম জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বাসভবনে নামাজ আদায় ও দোয়া-মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন।

জিয়াউর রহমান তার ঘটনাবহুল কর্মময় জীবনের কারণেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের দৃঢ়তাসহ প্রভৃতি গুণাবলী এদেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মনসুর রহমান কলকাতায় একজন কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন।

শৈশব ও কৈশোরের একটি সময় গ্রামেই কাটিয়ে জিয়া পিতার সঙ্গে কলকাতায় এবং দেশ ভাগের পর করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাবুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সবচেয়ে অধিক খেতাব লাভ করে। সৈনিকজীবনে তিনি যেমন চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন ঠিক জাতীয় সকল সঙ্কটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেছেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যখন নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, জিয়াউর রহমানই তখন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীরোত্তম খেতাব লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যূত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয়। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। চারিদিকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আধিপত্যবাদের শ্যেন দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিল গোটা জাতি। এসময় সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াকে মুক্ত করা হয় এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন তিনি।

গভীর দেশপ্রেমের গুণাবলি দিয়ে জিয়াউর রহমান জাতির মধ্যে নতুন জাগরণের সৃষ্টি করেন। দেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান। দেশে ঐক্যের রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একদিকে যেমন চরম বামপন্থীরা স্থান পায় তেমনি চরম ডানপন্থীদেরও জায়গা দেয়া হয়। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। মাত্র ছয় বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুঁড়ির অপবাদ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জোগান। সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত জানাযায় স্মরণকালের সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন।

কর্মসূচি: ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকীর দিনে আজ সকাল ১১টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ, মাজার জিয়ারত, দোয়া-মোনাজাত করবেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০শে মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিনই বিকেল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় খাদ্য বিতরণ করবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। এছাড়া  বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print