বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই রমজান ১৪৪৬ হিজরি

করোনা আতঙ্ক: অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য কিছু পরামর্শ

প্রভাতী ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে মহাতঙ্ক সৃষ্টি করেছে নভেল করোনাভাইরাস। লাখ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং গর্ভস্থ শিশুরা। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের নিয়ে শঙ্কিত সব মহল। গর্ভস্থ শিশুর ওপর করোনার প্রভাব সম্পর্কে এখনো অন্ধকারে চিকিৎসক-গবেষকরা। তবে তাদের পরামর্শ, ভয় না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ও তার পরিবারকে এ সময়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।

গবেষকদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত, কভিড ১৯-এর সরাসরি প্রভাব শেষ ট্রাইমেস্টারে থাকা গর্ভস্থ শিশুর উপরে পড়ে না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনের উহান প্রদেশের তংজি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক সমীক্ষা হয়। সাধারণ করোনা সংক্রমিতদের মতো উপসর্গ নিয়ে সেখানে ভর্তি সাত জন কভিড-১৯ পজ়িটিভ অন্তঃসত্ত্বার উপরে চীন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যৌথ ভাবে সমীক্ষাটি করে। সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে জন্মের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, শুধু এক নবজাতের শরীরে ওই ভাইরাস রয়েছে। একাধিক জীবনদায়ী ব্যবস্থার সাহায্যে সংক্রমণ কাটিয়ে এখন সুস্থ সেই মায়েরা ও শিশু সুস্থ। সমীক্ষায় প্রকাশ, শেষ ট্রাইমেস্টারে সংক্রমিত হয়েছিলেন ওই ৭জন।

তবে প্লাসেন্টার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত মায়ের থেকে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে সংক্রমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা। সে ক্ষেত্রে প্রথম বা দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে অন্তঃসত্ত্বা সংক্রমিত হলে ভ্রূণে কী প্রভাব পড়বে, গবেষণাসাপেক্ষ সেটি। তাই ওষুধ, আইভিএফ-সহ অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতির সাহায্যে গর্ভধারণের প্রক্রিয়া বিশ্বজুড়ে বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছে ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি’ এবং ‘আমেরিকান সোসাইটি অব রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন’।

ভারতের চিকিৎসকদের মতে, যেহেতু প্রথম এবং দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রসূতি করোনা আক্রান্ত হলে ভ্রূণে কী প্রভাব পড়বে তা অজানা, তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেও এখন গর্ভধারণ না করাই বাঞ্ছনীয়। তবে যারা এরই মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা, তাদের সংক্রমণ এড়াতে ডব্লিউএইচও এবং আইসিএমআর-এর দেওয়া সাধারণ নির্দেশগুলি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে ‘ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’।

সংক্রমণ এড়াতে- ওষুধ ও বিকল্প পদ্ধতির সাহায্যে গর্ভধারণের যাবতীয় প্রক্রিয়া বিশ্বজুড়ে আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ। এমনকি, স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেও এ সময়ে অন্তঃসত্ত্বা না হওয়ার পরামর্শ।

অন্তঃসত্ত্বাদের পরামর্শ:

• বাড়িতে থাকুন এবং দূরত্ব  বজায় রাখুন।
• বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। মুখে-চোখে হাত দেবেন না। অসুস্থ ব্যক্তির থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে ঘরেও মাস্ক পরুন।
• তোয়ালে, সাবান, বাসন-সহ নিজের ব্যবহৃত জিনিস আলাদা রাখুন।
• ঘরের দরজা-জানলা খুলে রাখুন।
• জ্বর, সর্দি, কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সেই নির্দেশিকা মেনে অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাভাবিক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। তার কথায়, ‘এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ জরুরি সুষম খাবার খাওয়া। চিকিৎসকের সঙ্গে ফোন-হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখা। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা যাবে।’

স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক কুশাগ্রধি ঘোষ আবার বলছেন, ‘জ্বর-সর্দি-কাশি হলে তা গোপন না করে চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন। উপস্বর্গ থাকলে অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পদক্ষেপ করবেন ডাক্তার। না-হলে যদি একের পর এক চিকিৎসক এবং নার্স সংক্রমিত হন, তা হলে স্বাস্থ্য পরিষেবাই ভেঙে পড়বে।’

মা যদি করোনা পজ়িটিভ হন, সে ক্ষেত্রে কি সদ্যোজাতকে স্তন্যপান করানো বন্ধ রাখা উচিত? স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত বলছেন, ‘এখনো পর্যন্ত জানা গেছে, আক্রান্ত মায়ের থেকে কোলস্ট্রামের মাধ্যমে নবজাতের করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তাছাড়া নবজাতের মায়ের দুধ জরুরি। অতএব মা কভিড-১৯ সংক্রমিত হলেও দুধ খাওয়াবেন। তবে সরাসরি না। হাত এবং স্তন সাবান দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে মাস্ক, গ্লাভস এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে পাম্প করে দুধ বার করে নিয়ে তবেই খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া যাবতীয় নির্দেশিকা মেনে অন্তঃসত্ত্বাকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।’

সূত্র- আনন্দবাজার।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print