Search

শুক্রবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

ভারতের বাইরে আশ্রয়ের ইচ্ছা নেই

নিহতদের জন্য শোক জানাই, তবে ক্ষমা চাইবো না: শেখ হাসিনা

আমার এখন একমাত্র অগ্রাধিকার বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা

আমি নিহত প্রতিটি শিশু, ভাইবোন, বন্ধু ও আত্মীয়ের জন্য শোক জানাই। কিন্তু ক্ষমা চাইবো না, কারণ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আমি দায়ী নই। এটা ছিলো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, আমাকে হটানোর অংশ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের মুখে থাকা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি নিহতদের জন্য শোকাহত হলেও কারও কাছে ক্ষমা চাইতে রাজি নন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ভারতের বাইরে আশ্রয় নেয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) প্রকাশিত রয়টার্স, এএফপি ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এ ছাপা সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে সাজানো নাটক।’

জাতিসংঘের স্বাধীন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয় এবং কয়েক হাজার আহত হন। বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে প্রসিকিউশন।

এ প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন,

আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ—আমি বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছি—তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে আমি স্বীকার করি, কমান্ড চেইনের ভেতরে কিছু ভুল হয়েছিলো।

তিনি আরও বলেন, আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যথেষ্ট সময় দেয়া হয়নি। এ আদালত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। রায় আগেই নির্ধারিত।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর তার মামলার রায় ঘোষণার দিন জানাবে। হাসিনা এখন পর্যন্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি কিংবা কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দেননি।

রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এ রায়ের জন্য আমি অবাক হবো না, ভয়ও পাবো না। এ আদালত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের সঙ্গে আলাপে হাসিনা বলেন,

আমি নিহত প্রতিটি শিশু, ভাইবোন, বন্ধু ও আত্মীয়ের জন্য শোক জানাই। কিন্তু ক্ষমা চাইবো না, কারণ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আমি দায়ী নই। এটা ছিলো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, আমাকে হটানোর অংশ।

তিনি অভিযোগ করেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে চক্রান্ত করছে। হাসিনার ভাষায়, এটা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার শামিল, যা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ভয়ংকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগসহ প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে না। লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা মানে রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি ধ্বংস করা।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায় নয়, আত্মঘাতীও। এ পরিস্থিতিতে কোনও নির্বাচন হলে তা ভবিষ্যতের বিভেদের বীজ বপন করবে।

এএফপির কাছে হাসিনা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে, তার কোনও প্রমাণ নেই। এ ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হাতের পুতুল।

দিল্লিতে অবস্থান নিয়ে হাসিনা বলেন, আমি এখানে খুব শান্তিতে আছি। লোধি গার্ডেনে হাঁটতে যাই, তবে পরিবারের হত্যার অভিজ্ঞতার কারণে সবসময় সতর্ক থাকি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনও ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে থাকা উচিত নয়। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো সাংবিধানিক শাসন ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, সেটা দিতে হলে ইউনূসকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুনর্বহাল করতে হবে। আমার এখন একমাত্র অগ্রাধিকার বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print