
চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় যুবদলের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো প্রায় ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে পুলিশ এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত ৬ জনসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
এর আগে, সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডের বগার বিলের মুখ এলাকায় গোলাগুলির এই ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রদলকর্মীর নাম মো. সাজ্জাদ। তিনি নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) এমদাদুল হক বাদশার অনুসারী ছিলেন। মো. সাজ্জাদ নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা মোহাম্মদ আলম বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন- চকবাজার থানা ছাত্রদলের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ও বর্তমানে যুবদলের পদ প্রত্যাশী বোরহান উদ্দিন, পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন তাঁতী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম; বোরহানের সহযোগী মো. মিল্টন, ছোট বাদশা, মো. ইউসুফ, সবুজ ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, এমরান হোসেন, মোহাম্মদ দিদার, রিয়াজ করিম, মো. জিহান, তামজিদুল ইসলাম, মো. আরাফাত, বোরহান ওরফে ছোট বোরহান, মো. মোজাহের, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা ও মো. নাঈম উদ্দিন।
পুলিশ জানায়, রাতে গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ৬ জনের নাম মামলার এজাহারে রয়েছে। তারা হলেন-সবুজ ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, এমরান হোসেন, মো. জিহান, তামজিদুল ইসলাম ও মো. আরাফাত। এছাড়া গ্রেপ্তার অপর দুজন হলেন-মো. ওসমান ও দিদারুল ইসলাম। গ্রেপ্তার সবাই যুবদলের কর্মী। পুলিশের অভিযানে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রধান আসামি বোরহানকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বোরহান এবং তাঁতী লীগ নেতা নজরুল নিজেদের নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর অনুসারী পরিচয় দিয়ে আসছেন। তবে গাজী সিরাজ দাবি করছেন, তার সঙ্গে এই ২ জনের কোনো সম্পর্ক নেই।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন তার ছবি ব্যবহার করে নগরের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের টাঙানো ব্যানার তুলে ফেলার নির্দেশ দেন। এরপর বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় লাগানো কিছু ব্যানার খুলে ফেলেন মো. জসিম নামের এক যুবদলকর্মী। এর মধ্যে শাহাদাত ও সিরাজের ছবিসহ বোরহানের একটি ব্যানারও ছিল। ব্যানার ছেঁড়ার কারণে রাতে জসিমকে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল তুলে নিয়ে যায়। আটকে রেখে মারধর করা হয়। জসিমকে আটকে রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে ছাড়িয়ে আনতে যান ছাত্রদল-যুবদলের কিছু নেতাকর্মী। এ সময় বাকলিয়া এক্সেস রোডে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বোরহানের লোকজন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজ্জাদের মৃত্যু হয়।
আসামিরা বাকলিয়া এলাকায় জায়গা দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে আসছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। প্রধান আসামি বোরহান একসময় যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর গাজী সিরাজের ছবি দিয়ে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সফলতা কামনা করে বেশ কিছু ব্যানার টাঙান তিনি।
বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ছাত্রদলকর্মী খুনের মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করেছেন।









