
নভেম্বরের মধ্যেই গণমাধ্যম সংক্রান্ত বেশ কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন ও অধ্যাদেশগুলো প্রণয়ন করতে চান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। নভেম্বরের পর মন্ত্রিসভার (উপদেষ্টা পরিষদের) বৈঠক আর হবে না, তখন সরকার নির্বাচন কমিশনের অধীনে তার ভূমিকা পালন করবে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, যেসব মিডিয়া (পত্রিকা, অনলাইন ও টেলিভিশন) ন্যূনতম বেতন কাঠামো মানবে না তারা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবে না বলেও জানান তিনি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাইব বিজ্ঞাপনের হার বাড়ুক। কিন্তু এ সুবিধা আমরা দেবো, এর জন্য আমরা সাংবাদিকদের জন্য একটা বেসিক স্যালারি স্ট্রাকচার প্রস্তাব করে যেতে চাই।সাংবাদিকদের যদি এ বেসিক স্যালারি না দেওয়া হয়, তাহলে ওই পত্রিকা আমরা বা আউটলেটকে আমরা এ সুবিধা দেবো না।
তিনি বলেন, পত্রিকা মালিক ও সম্পাদকরা যদি ইমিডিয়েটলি এটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেন, তাহলে আমরা এ সংস্কারের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব।
কারণ আমরা সরকার থেকে সুবিধা দেবো, জনগণের টাকায় ৯০০ টাকার বদলে ১৮০০ টাকা বিজ্ঞাপন দেবো, কিন্তু আপনি সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন দেবেন না—এতে যে নৈতিক সংকট তৈরি হয় তাতে সাংবাদিকরা এখানে-ওখানে খ্যাপ মারে, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির মধ্যে ঢুকে যায়। এটা বন্ধের জন্য অবশ্যই সাংবাদিকদের ডিগনিফাইড লাইফ দিতে হবে।
পত্রিকার প্রচারসংখ্যা নিয়ে অনিয়ম প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, যদি কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ৩ লাখ বলা হয়, অথচ বাস্তবে ১ লাখ ৫০ হাজার হয়, তাহলে তারা নির্দিষ্ট হারে বিজ্ঞাপন পাবে না। বড় পত্রিকা বা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত কিছু পত্রিকা ফোন করে বাড়তি বিজ্ঞাপন পায়—এ অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই, ন্যায্যতা বজায় রেখে হার বাড়ুক, কিন্তু ভুয়া প্রচারসংখ্যা যেন না দেখানো হয়।
তিনি বলেন, টেলিভিশন মিডিয়া একটা প্রস্তাব করেছে। এটাও শর্ত সাপেক্ষ করে দেবো, আমরা ডিজিটাইজেশন করব। টেলিভিশন মিডিয়া ডিজিটাইজেশন হলে কয়েকশ কোটি টাকা রেভিনিউ বাড়বে টেলিভিশনের। এতে টিভি নেটওয়ার্কে যারা কাজ করেন, যারা মালিক বা ব্যবসায়ী তারাও উপকৃত হবেন। ডিজিটাইজেশনের কারণে প্রত্যেকটা টেলিভিশন তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ভালো বিজ্ঞাপন পাবে। এই সুবিধাও আমরা দেবো এ শর্ত সাপেক্ষে যে সাংবাদিকদের একটা বেসিক স্যালারি দিতে হবে, যেটার একটা লিমিট আমরা ঠিক করতে চাই। এরপর আপনারা ইনক্রিমেন্ট দেবেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বর্তমানে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় একটি অধ্যাদেশ এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য বিধিমালা প্রণয়নের কাজ করছে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা।
তথ্য উপদেষ্টা আরও জানান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যও বিধিমালা তৈরির কাজ করছে। এটি আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার কমিশন থেকে ২৩টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব তোলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে ১৩টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন করছে। নভেম্বরে কেবিনেট ক্লোজ হয়ে যাবে, যা করার আগামী মাসের মধ্যে করতে চাই। এছাড়া যেসব পত্রিকা ছাপা হয় না ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
নবম ওয়েজ বোর্ড নিয়ে নোয়াব ও পত্রিকা মালিকদের সঙ্গে গত এক বছরে তিনবার বসে চেষ্টা করেছেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। মালিকরা রাজি না হলে বিজ্ঞাপনের হার কমিয়ে দেব। যারা প্রতিযোগিতায় মাঠে থাকতে পারবে না, তারা চলে যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ডিসেন্ট বেতন যেন সাংবাদিকরা পান, সেজন্য বলে আসছেন তথ্য উপদেষ্টা। বেতনের সমস্যার কারণে আমরা ইউনিয়ন লিডারদের কাছে যাই। তারা আমাদের সেরের দরে বিক্রি করে। গুলশান বনানীতে নিজেদের বাড়ির মালিকানা পায়।
ব্যাঙের ছাতার মতো শত শত নিউজ পোর্টাল রয়েছে মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, যারা অন্যের আর্টিকেল চুরি করে। এদের বিরুদ্ধে কিছু করলে বলে যে গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ। সরকার ইথিকাল জার্নালিজম দেখতে চায়। কেউ যেন কপি না করে। ভালো জার্নালিজমে যারা বিনিয়োগ করে, সেটা প্রটেক্ট করা সরকারের দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন, প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ ও ডিআরইউর সহ সভাপতি গাজী আনোয়ার।









