Search

শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের কেউ নয়

ইউনূস বাংলাদেশকে ‘অত্যন্ত বিপদজনক’ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন: ফরহাদ মজহার

প্রধান উপদেষ্টার বার বার বিদেশ সফরের সমালোচনা করেন মজহার

অন্তর্বর্তী সরকার ‘অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে’ আন্তরিক না হয়ে কেন নির্বাচন দিতে তৎপর হয়েছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে ‘অত্যন্ত বিপদজনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার(৩০ আগষ্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের কেউ নয়। এখানে যারা বসে আছে, তারা অনেকে সরাসরি গণঅভ্যুত্থানে রাস্তায় বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে। আমরা বছরের পর বছর নির্যাতিত হয়েছি। আমাদেরকে কথা বলতে দেওয়া হয় নাই।

“আমরা ঘরবন্দি থেকেছি। আমাদেরকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে আমরা গণঅভ্যুত্থানের একেবারে যেটাকে বলে সৈনিক, সেখান থেকে উঠে এসে আপনাদের সামনে। আমাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা সেই ভূমিকার জোরে, সেই বৈধতার জোরে আমরা কথা বলছি। ড. ইউনূস এটা করেন নাই।”

মজহার বলেন, “তারপরেও কেন তাদেরকে আমরা গ্রহণ করেছি? আমরা তার বিরোধিতা করিনি? আপনারা আমার বক্তব্য শুনেছেন। আমরা গ্রহণ করেছি, কেন? আমাদের আশা ছিল যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্বল রাষ্ট্রের যে দুর্বলতা, সে দুর্বলতাগুলো আমরা মোকাবেলা করতে পারব, তার ভালোবাসা যদি পাই। তার আন্তরিকতা যদি পাই। তিনি যদি আমাদের মনের কথা বোঝেন, তিনি যদি গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায়টুকু বোঝেন।

“কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, তিনি এটা বোঝেন নাই। শুধু বোঝেন নাই। এখন তিনি যে জায়গায় গেছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক জায়গার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।”

চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের নেতাদের ইউনূস যেভাবে সামনে এনেছেন, তারও সমালোচনা করেন ফরহাদ মজহার।

তিনি বলেন, “প্রথম তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) ভুল করেছেন, তিনি এসেই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের, তরুণ ছাত্রদেরকে ধরে নিয়ে এসে কী বললেন? যে ওরা হল মাস্টারমাইন্ড। এই যে একটা… এইটা আমি থতমত খেয়ে গেছি– কী করে!

“জনগণ হল যেটাকে আমরা দার্শনিকরা বলি পলিটিক্যাল সাবজেক্ট। সত্যিকারের যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কর্তা সত্তা, গণঅভ্যুত্থানের কর্তা সত্তা হচ্ছে জনগণ। কোনো ব্যক্তি নয়।”

মজহার বলেন, “আমরা যারা আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম, আমরা দেখেছি সেখানে শিবির ছিল। সেখানে সেক্যুলার লোকজন ছিল। বামপন্থিরা ছিল। এমনকি তরুণ, বহু ছাত্ররা, যাদেরকে আপনারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছেন, তারাও ছিল।

“সকলে মিলে এই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে। সে নেতৃত্ব দেবার পেছনে প্রধান যে শর্ত ছিল, কী সেটা? আমরা নির্দলীয়ভাবে… দলের স্বার্থকে রক্ষা করাটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে এই ফ্যাসিস্ট সরকার এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উৎখাত করা। নতুন রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া শুরু। এটা ছিল আমাদের অভিপ্রায়।”

আন্দোলনে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে, এখনও অনেকে হাসপাতালে রয়েছে– সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ড. ইউনূস দেখছেন এ বাস্তবতা। এত আত্মত্যাগের পরে আপনি কীসের ভিত্তিতে নির্বাচনের কথা শুরু করলেন? এটা আমার অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে।

“আমি প্রথম থেকে বলে এসেছি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল বলে কিছু নাই। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল বলে কিছু নাই। আমাকে প্রমাণ করুন যে রাজনৈতিক দল বলে কিছু আছে। রাজনৈতিক দল মানে জনগণের সেবা করে; রাষ্ট্রকে, জাতিকে তারা পথ দেখায়। নতুন কথা বলে।

“এখানে আছে কী? যেটাকে আমরা বলি লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি। যারা দুর্বৃত্ত, যে দুর্নীতিবাজ, লুটপাট যারা করেছে তাদের প্রতিনিধি ডাকাতদলকে আপনি রাজনৈতিক দল বলছেন। এই রাষ্ট্র থেকে মুক্ত না হলে নির্বাচন নিয়ে কথা বলাটা বাতুলতা মাত্র। এটার কোনো অর্থ নাই।”

ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেভাবেই প্রস্তুতি সারছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনেরও ব্যস্ততা বাড়ছে। কিন্তু এর কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না ফরহাদ মজহার।

তিনি বলেন, “আপনি কেন নির্বাচনটা করতে চাইছেন ড. ইউনূস? তখন এটা প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়ায়? একটা জিজ্ঞাসার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আপনি তো গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছেন। আপনি গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক নন। আপনি গণঅভ্যুত্থানের কেউ নন। আমি আবারও বলছি, এখানে ভুল বোঝার কোনো অপশন নাই।

“বারবার বলেছি আপনাকে আমরা এটা। এবং তাদের (রাজনৈতিক দল) সঙ্গে আপনি কথা বলতে বসেছেন। আপনি কোনো জনগণের সঙ্গে কথা বলতে বলেন নাই। আপনাকে আমরা দেখিনি কোনো জেলায় গিয়ে এতবড় গণঅভ্যুত্থানের পরে সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ করে কোনো কথা বলেছেন। তাদের স্বার্থের পক্ষে আপনি কোনো কথা বলেছেন?”

প্রধান উপদেষ্টার বার বার বিদেশ সফরের সমালোচনা করে মজহার বলেন, “আপনি থাকবেন এক থেকে দেড় বছর, এর মধ্যে আপনি সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর তো কোনো যুক্তি নেই। আপনি দেশের সমস্যাটা কী বুঝবার চেষ্টা করুন। আপনাকে জাতীয় ঐকমত্য করতে বলেছে কে? আমরা তো জাতীয় ঐকমত্য করতে বলি নাই। আমরা গণঅভ্যুত্থান করেছি, একটা সরকার গঠন করেছি।

“আপনাকে তো আমরা বলি নাই যে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান রেখে, এই সংবিধান রক্ষা করার শপথ নিয়ে একটা উপদেষ্টা সরকার গঠন করবেন। আপনি কেন গঠন করলেন? কী যুক্তি?”

বিগত আওয়ামী লীগ আমলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদৌ পদত্যাগ করেছেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তা প্রকাশের দাবি জানান ফরহাদ মজহার।

তিনি বলেন, “আমি বলছি, ১০৬ অনুচ্ছেদে আপনাকে মতামত দেওয়া হয়েছে। দেখি, দেখান আমাদেরকে কী ছিল সে মতামতে। কারা ছিল সে মতামতে। সুপ্রিম কোর্টের কোন আইনজীবী এবং কোন বিচারপতি মত দিয়েছেন? তাদের নাম কী? আমরা কথা বলতে চাই। আমরা তর্ক করতে চাই।

“আমাদের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। আমি ড. ইউনূসকে করজোরে বলব, আমাদেরকে পদত্যাগপত্র দেখান। আপনারা এখনও দেখাতে পারেননি। তারপরে প্রেসিডেন্ট বলছে, না। তিনি জানেন না পদত্যাগপত্র কোথায়। এটা তো হতে পারে না। আপনি তো তামাশা করতে পারেন না। আপনি তো রাষ্ট্র এবং ১৭ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারেন না।”

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print