Search

শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

মামলা করার নির্দিষ্ট একটি ফরমেট আছে- ওসি

সাংবাদিককে ‘বাড়াবাড়ি’ না করার হুমকি পটিয়া থানার ওসির

পটিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই চুরি, ছিনতাই, অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে

চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই চুরি, ছিনতাই, অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। চাঁদাবাজি, জায়গা দখল-বেদখল ও আধিপত্যকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের মারামারি হচ্ছে।

পটিয়া থানার পুরাতন সব অফিসারকে একযোগে বদলি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা না নিয়ে ঘটনার আগাম প্রমাণ হিসেবে সাক্ষী এবং ভিডিও ফুটেজ দাবি, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নিজেদের মতো করে অভিযোগ লিখে মামলা দায়ের, অধিকাংশ ভিকটিমকে নিরাশ করে ফিরিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।

ছিনতাইকারীদের হাতে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হওয়ার পাশাপাশি তাদের হাতে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। গত দুই মাসে পটিয়ার সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার(১৮ সেপ্টেম্বর) হাইদগাঁও থেকে এক নারী- তাকে মারধর করে ৬৫ হাজার টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ নিয়ে বিকালে থানায় গেলে ডিউটি অফিসার তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। রাতে ওসির সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাৎক্ষণিক আইনগত সহযোগিতার বদলে আগাম ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষী না থাকলে অভিযোগ বা মামলা কোনোটাই নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন।

সেই অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমের হাতে এলে শুক্রবার সকালে সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে আগাম সাক্ষী, প্রমাণ ও ভিডিও ফুটেজ বাধ্যতামূলক কিনা জানতে চাওয়া হয় ওসির কাছে। এ সময় বাড়াবাড়ি না করার জন্য পটিয়া থানার ওসি সাংবাদিককে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেন।

জানা গেছে, পটিয়ার ভাটিখাইনে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি খামারে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই খামারের পক্ষ থেকে ৮-১০ জন ডাকাত এতে অংশ নিয়েছে উল্লেখ করা হলেও তাদের সেই লিখিত অভিযোগ পাল্টে নেওয়া হয় ছিনতাই দস্যুতার মামলা। পটিয়া থানা পুলিশের তৈরি করা অভিযোগ ৮-১০ জনের স্থলে মাত্র ৪ জনের কথা উল্লেখ করা হয়। সে সময় ওসি তাদের বলেন- মামলা করার নির্দিষ্ট একটি ফরমেট আছে। সেই ফরমেটে মামলা করতে হবে।

খামারের হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম ও প্রকল্প পরিচালক বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা আইনের মারপ্যাঁচ তো বুঝি না।

এদিকে প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও চুরির ঘটনায় থানায় গিয়েও প্রতিকার মিলছে না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পটিয়ায় দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। উভয় ঘটনায় স্থানীয় লোকের হাতে ৬ ছিনতাইকারী আটক হয়। নিখোঁজ হয় পটিয়া সরকারি কলেজের এক নবীন ছাত্রী।

এর আগে গত বুধবার সকালে মুন্সেফ বাজার এলাকায় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম আরজুকে (৩৫) অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। লোকজন তৎপর হলে মুকুটনাইট গ্রামে ওই ব্যবসায়ীকে ফেলে যায়।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার দক্ষিণ ভুর্ষির কেঁচিয়াপাড়ায় ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন রিকশাচালক মো. শহীদ। পটিয়া বিভিন্ন ব্যক্তির অভিযোগ, উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দিন আর রাতে সমান তালে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়।

উপজেলার কেলিশহর, দক্ষিণ ভুর্ষি, হাইদগাঁও, কচুয়ায়, জঙ্গলখাইন, ছনহরা, হাবিলাসদ্বীপ, কোলাগাঁও, শান্তিরহাট, জিরি ছাড়াও পটিয়া বাইপাসের ভাটিখাইন পয়েন্ট, বাকখালী পয়েন্ট, দক্ষিণ ঘাটা পয়েন্ট, আনোয়ারা সড়কের পয়েন্ট, দক্ষিণ ঘাটা সড়কের মুখে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে পটিয়ায় কয়েকটি সেক্টর ভাগ করে টাকা তোলার জন্য সুমনের নেতৃত্বে নিয়োগ করা হয়েছে ৬ জন ক্যাশিয়ার।

উপজেলার ভাটিখাইন গ্রামের সমাজসেবক আশিকুল মোস্তফা তাইফু ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সন্ধ্যার পর হলেই পটিয়ার বাইপাস যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে পড়ে।

অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম আরজু বলেন, অপহরণকারীরা তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে মারধর করা হয়।

পটিয়া থানার ওসি মো. নুরুজ্জামান ডাকাতির ঘটনায় অভিযোগ পাল্টে ছিনতাই দস্যুতার মামলা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

সংঘটিত ঘটনায় থানায় গেলে আগাম সাক্ষী ও ভিডিও ফুটেজ না থাকলে আইনি সহায়তা না দেওয়ার বিষয়ে শুক্রবার সকালে ওসির কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তিনি বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি প্রদান করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print