
চট্টগ্রামে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার (১ জানুয়ারি) নগরীর টাইগারপাস সংলগ্ন রাতে নেভি কনভেশন সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের পর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফখরুল আনোয়ারকে আটক করা হয়। এ সময় সুযোগ বুঝে সাবেক মেয়র মনজুর আলম ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন।
নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, “ফখরুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা আছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।” তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে সাবেক দুই এমপি সনি ও নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর উপস্থিতি পুলিশ ‘টের পায়নি’।
ফখরুল আনোয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ারের ছোট ভাই ও ফটিকছড়ির সাবেক এমপি খদিজাতুল আনোয়ার সনির চাচা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, ওই কনভেনশন সেন্টারে ফখরুল আনোয়ার ও শাহজাদী সৈয়দা সায়েমা আহমেদের একমাত্র ছেলে সৈয়দ মিনহাজুল আনোয়ারের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলমের ছেলে নিজামুল আলম ও সৈয়দা শারমিন আকতারের বড় মেয়ে সৈয়দা মাহবুবা হোসনে আরার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। ওই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনও।
ওই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দুই সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনি উপস্থিত থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী নৌবাহিনী পরিচালিত ওই কনভেনশন সেন্টারে যান। প্রথমে তারা সেখানে ভোজে অংশ নেন। ঘন্টাখানেক পরে সেখানে আরও প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী আসেন। তাদের অনেকের হাতে লাঠিসোটা ছিল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে একপর্যায়ে ফখরুল আনোয়ারকে ঘিরে রাখেন। এরপর একদল নেতাকর্মী ঢুকে ‘আবু সাইদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমার ভাই কবরে খুনী কেন বাইরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে হই হট্টোগল শুরু করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকাদেরও অনেকে বলেছেন, ওই দুই সাবেক এমপি সেখানে ছিলেন না।
অনুষ্ঠানস্থলে বিক্ষোভকারীরা ফখরুল আনোয়ারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভও করতে থাকেন। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গিয়ে বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বাইরে যায়।
আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ আমন্ত্রিত নারী অতিথিদের হেনস্তা করেছেন। একপর্যায়ে ফখরুল আনোয়ারকেও তারা মারধর করেছেন।
‘এটা কি মব জাস্টিসের মধ্যে পড়ে না’— এমন প্রশ্ন রেখে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘তারা প্রথমে পেট ভরে খেয়েছে। এরপর লোকজন জড়ো করে পাত্রের বাবা ফখরুল আনোয়ারকে লাঞ্ছিত করেন। অতিথিদেরও কাউকে কাউকে অপদস্থ করেছেন। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটবে আমরা কেউ কল্পনাই করিনি।’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কোনো নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন, কনভেনশন সেন্টারের ভেতরে নৌবাহিনীর সদস্যরা লাঠি হাতে তাদের মারধর করেছেন। কাউকে কাউকে কিল-ঘুষিও মেরেছেন।