রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

চিকিৎসার নামে প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান

অপ্রয়োজনীয় ‘টেস্ট’ দিয়ে হয়রানি না করতে চিকিৎসকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে

চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে মনোযোগ দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, “বড় ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না। অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে।”

সোমবার(১৩ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে বক্তৃতা করছিলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ বলেন, “বিএসএমএমইউয়ের আউটডোরে প্রায় সকালে ল্যাবরেটরি বিভাগ খোলা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে রোগীদের রিপোর্ট সংগ্রহে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।”

সক্ষমতার দিক থেকে বিএসএমএমইউকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ অভিহিত করে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নেই।

চিকিৎসার নামে সব ধরনের প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।

“কিছু সংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে চিকিৎসার নামে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা চরম হয়রানির শিকার হন।”

মানবসেবাকে ‘স্বর্গীয় গুণ’ হিসেবে বর্ণনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের উপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যেকোনো রোগীর পরম কাম্য।”

আবদুল হামিদ বলেন, “চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশেও বিদেশের মতো ওষুধের বাণিজ্যিক নামের পরিবর্তে সাধারণ নাম (জেনেরিক) চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে।”

চিকিৎসা সেবায় গবেষণা কার্যক্রমের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বহুবিধ কারণে রোগ-জীবাণুর ধরন ও প্রকোপ পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে মানব জাতির জন্য হুমকি মোকাবিলায় বিভিন্ন রোগের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নির্ণয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমাদের দেশের রোগব্যাধির ধরন উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। তাই আমাদের নিজস্ব গবেষণাকর্মই কেবলমাত্র পারবে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রোগসমুহের কার্যকর ও সুলভ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে এদেশের রোগীদের সত্যিকারের সমাধানটি সহজলভ্য করতে।”

নার্সদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, “হাসপাতালে একজন রোগী সার্বক্ষণিক সেবা ও সাহচর্য পায় নার্সদের কাছ থেকে। একজন নার্সের সুন্দর ব্যবহার ও উৎসাহব্যাঞ্জক কথা রোগীর হাসপাতালে অবস্থানকে আরামদায়ক ও তার আরোগ্য ত্বরান্বিত করে।”

প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “তাই আমাদের ভাবতে হবে আসল সমস্যাটা কোথায়। রোগীর আস্থা অর্জনে একজন ডাক্তারকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে যে, ডাক্তারগণ আল্লাহ বা ভগবান নন। তারাও মানুষ। তারা কেবল চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন।

“তাই রোগীর কিছু হলেই ডাক্তারদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাংচুর করবেন- এটাও কাম্য নয়। এজন্য ডাক্তার, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন অবস্থা কারোরই কাম্যই নয়, যার ফলে সাধারণ মানুষ ও রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।”

অনুষ্ঠানে ‘সমাবর্তন বক্তা’ হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজ-বর্ধন আজাদ।

সমাবর্তনে তিনজনকে পিএইচডি ডিগ্রি এবং ৩৫ জনকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয়।

পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্তরা হলেন- সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, বিএসএমএমইউয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক কাজী শহিদুল আলম।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান,  প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print