
প্রভাতী ডেস্ক : দুই সন্তানকে জাপানি মায়ের জিম্মায় দেওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি বাবার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে আদালত। ঢাকার জেলা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূইয়া বৃহস্পতিবার(১৬ ফেব্রুয়ারী) আপিল গ্রহণ করে শুনানির জন্য পরবর্তীতে তারিখ দেওয়ার কথা জানান। সেইসঙ্গে দুইপক্ষকে সালিশে বসে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শও দেন তিনি।
তবে ছোট মেয়ে এর আগে বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকায় তিনি সেই পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে স্থিতাবস্থার একটি আবেদন করেন, যা বিচারক আমলে নেননি।
আদালতে ওই দুই শিশুর বাবা আপিলকারী ইমরান শরীফ ও শিশুদের মা নাকানো এরিকো হাজির ছিলেন।
সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক এর আগে বাচ্চাদের আলাদা ডেকে কথাবার্তা শুনেছেন কিনা- জানতে চেয়ে বিচারক হাবিবুর রহমান বলেন, “শিশুরা কার সঙ্গে থাকবে, সে বিষয়ে একেক সময় একেক কথা বলবে। কিন্তু আপনারা কল্যাণের বিষয়টি দেখবেন। ন্যাচারাল ট্রেন্ড, ন্যাচারাল ল এর বিষয়টি আসল।”
আদালতে আপিলকারীর আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী, মো. নূরুল ইসলাম মিলন এবং বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আহসানুল করিম ও শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
দুই সন্তানের জিম্মা পেতে বাংলাদেশে আসা জাপানি নারী নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে শিশুদের বাবা বাংলাদেশি ইমরান শরীফের মামলা গত ২৯ জানুয়ারি খারিজ করে দেয় আদালত।
ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান যে রায় দিয়েছিলেন সেখানে বলা হয়, মামলাটির বিচার করার এখতিয়ার এই আদালতের আছে- এমনটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বাদী। তাছাড়া বাদী-বিবাদী ও শিশু দুটির সর্বশেষ বসবাসের স্থান জাপান হওয়ায় পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ধারা ৬ (১) অনুযায়ী মামলাটি চলতে পারে না।
এর ফলে দুই শিশু মায়ের জিম্মাতেই থাকবে বলে সেসময় জানান আইনজীবীরা। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২ ফেব্রুয়ারি আপিল করেন ইমরান শরীফ।
সন্তান নিয়ে বাবা মায়ের বিরোধের সূত্রপাত
বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফ জাপানের অবস্থানকালে ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। টোকিওতে এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন মেয়ের বাবা-মা হন। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি বিচ্ছেদের আবেদন করেন নাকানো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের ফিরে পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন নাকানো। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলে বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন নাকানো। পরে আপিল বিভাগ ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।
এরপর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে। ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেওয়া হয়।
এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে। আর পারিবারিক আদালতের রায়েও দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশনা আসে।