
প্রভাতী ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে খুন করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তদন্ত শেষে এমনটি জানা গেছে বলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিবি প্রধান বলেন, এ ঘটনায় আমরা ফারদিনের নিকট-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পারিপার্শ্বিক নানা বিষয় বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছি পরশকে কেউ খুন করেনি; তিনি মূলত আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন, তা তিনি পরিষ্কার করেননি।
তিনি বলেন, ‘ফারদিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ফারদিন বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি কেরানীগঞ্জ ব্রিজের পাড়ে গেছেন। এসময় তিনি অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে আমরা তার সঙ্গে দেখতে পাইনি।’
হারুন বলেন, ‘পুরোটা রাত ফারদিন এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। ডিস্টার্ব মাইন্ড না থাকলে কেউ এরকম ঘুরে বেড়ায় না। রামপুরা থেকে কেরানীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ থেকে জনসন রোড, জনসন রোড থেকে গুলিস্তান, গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী এরপর তার নিজের বাসা পার হয়ে চলে গেলেন ব্রিজে (ডেমরা)।’
তিনি বলেন, ‘যে লেগুনা চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, তাদের লেগুনা চনপাড়ার দিকে যায়নি। কারণ লেগুনা ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে ফারদিনকে নিয়ে গেছে ব্রিজের কাছাকাছি। তবে চনপাড়া যায়নি এটা তদন্তে পরিষ্কার। তাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে অথবা সে নিজে থেকেই চনপাড়া গেছে এরকম কোনো আলামত বা সিসিটিভি ফুটেজও আমরা পাইনি।’
হারুন বলেন, ‘তার রেজাল্ট গ্রাজুয়ালি খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে ৩.১৫ তারপর কমতে কমতে ২.৬৭ হয়। যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানত না। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। যেটা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিল। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দেয়। বুশরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হতাশায় ভুগছিল ফারদিন।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পর চিকিৎসক যে কথাটি বলেছিলেন, সে রকম তথ্য আমরা পাইনি। তাকে মারপিট বা জামা কাপড় ছেড়া ছিল না। কোথাও ধস্তাধস্তি হয়েছিল কি না বা তার শরীরে মারধরের দাগও আমরা দেখতে পাইনি। সুরতহালে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, মৃত্যুর রাতে তার ঢাকা শহরে ছুটোছুটি, ব্রিজের কাজ পর্যন্ত যাওয়া, তার হতাশা, মানসিক অবস্থা সবমিলিয়ে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে এটা সুইসাইড কেস।’
হারুন আরও বলেন, ‘ব্রিজের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিয়েছিল ফারদিন। সেখানেই ছিল তার সর্বশেষ অবস্থান। এরপর পানিতে ঝাপ দেওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। সেখান থেকেই আমরা মনে করছি এটা সুইসাইড।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ খবরে তার পরিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারদিনকে শনাক্ত করে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার শরীরে জখমের চিহ্ন ছিল।
এ ঘটনার তিন দিন পর নিহতের বাবা রানা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নিহতের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ইতোমধ্যে মামলাটি সুষ্ঠু ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়।








