
প্রভাতী ডেস্ক : বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক সমীক্ষায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে। ২০২২ সালে করা ওই সমীক্ষা অনুসারে, ৬৩.৫১ শতাংশ নারী (উত্তরদাতা) বলেছেন-তারা অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। গত বছরে যা ছিল ৫০.১৯ শতাংশ।
১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে রোববার(২৭ নভেম্বর) ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা: বাধা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে অনলাইন জরিপের মাধ্যমে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। সেখানে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ৩৫৯ জন নারী অংশ নেন।
সমীক্ষায় বলা হয়, ২০২২ সালে নারীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফরম বিশেষ করে ফেসবুক (৪৭.৬০%), মেসেঞ্জার (৩৫.৩৭%), ইনস্টাগ্রাম (৬.১১%), ইমো (৩.০৬%), হোয়াটসঅ্যাপ (১.৭৫%) ও ইউটিউবে (১.৩১%) হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে।
৪.৮০ শতাংশ নারী বলেছে, ভিডিও কল, মোবাইল ফোন এবং এসএমএসের মাধ্যমেও তারা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
এ বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে-৮০.৩৫ শতাংশ নারী অনলাইনে সহিংসতার মধ্যে ঘৃণ্য ও আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য, ৫৩.২৮ শতাংশ নারী ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি প্রদান এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব, ১৯.১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন।
১৭. ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন-তাদের নামে অন্য কেউ অনলাইনে নকল আইডি খোলায় তারা হয়রানির শিকার হয়েছে।
১৬.১৬ শতাংশ বলেছে-তাদের কার্যকলাপ সব সময় অনুসরণ করা হয় এবং ১৩. ১০ শতাংশ সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে, ১১.৭৯ শতাংশ বলেছে-তাদের ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে এবং ১১.৭৯ শতাংশ যৌন নিপীড়নের হুমকি পেয়েছে।
৩. ৬ শতাংশ উত্তরদাতাদের মতে, যৌন নিপীড়নের সময় তাদের ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড করা হয় এবং সেগুলো পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। ২.৬২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন-তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গোপনে পোস্ট করা হয় এবং পরে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। ১.৭৫ শতাংশ বলেছে-তাদের ছবি সম্পাদনা করে পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়, অনলাইন সহিংসতায় নারীদের জীবনে গুরুতর প্রভাব হলো মানসিক আঘাত, হতাশা ও উদ্বেগ (৬৫.০৭%)। দ্বিতীয় প্রভাব হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা বা মতামত প্রকাশ করায় আস্থা হারানো (৪২.৭৯%)। ২৫. ৩৩ শতাংশ ট্রমার শিকার হয়েছেন এবং ২৪. ৮৯ শতাংশ আত্মমর্যাদা হারিয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়, অনলাইন সহিংসতা এবং হয়রানির কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা নারীর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত করেছে। ১৪.৯১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে এবং ৮৫ শতাংশেরও বেশি ভুক্তভোগী অভিযোগ না দিয়ে নীরব ছিলেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে ৪৪.১২ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে, ২০. ৫৯ শতাংশ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে, ১১. ৭৬ শতাংশ জাতীয় জরুরি পরিষেবার (৯৯৯) মাধ্যমে, ১১.৭৬ শতাংশ থানায়, ৫. ৮৮ শতাংশ সাইবার ক্রাইমের ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সিটিটিসি ও ডিএমপির মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন।
সমীক্ষায় উত্তরদাতারা অনলাইন হয়রানি, অপব্যবহার এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং দ্রুত শাস্তি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি অভিমত দিয়েছেন।