
প্রভাতী ডেস্ক : বিদেশি কূটনীতিকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ‘সময় হলে’ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
শনিবার(২৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের মন্তব্যের বিষয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিদেশি কূটনীতিকেরা আচরণবিধি (কোড অব কনডাক্ট) মানছেন না। বাংলাদেশ কি তবে বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমেরিকার মতো দেশ তাদের নির্বাচনে (প্রেসিডেন্ট নির্বাচন) হস্তক্ষেপের অভিযোগে রাশিয়ার ২০-২১ জন কূটনীতিককে বের করে দিয়েছিল। এছাড়া আমেরিকার অভ্যন্তরীণ যেসব সংস্থা রাশিয়াকে সহযোগিতা করেছিল বলে তারা মনে করেছে, তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা শক্তিশালী দেশ হওয়ায় এসব পদক্ষেপ সহজেই নিতে পারে। তবে আমাদের সেই শক্তি কিংবা সামর্থ্য নেই, তাই আমরা এ পদক্ষেপ নেইনি। তবে সময় হলে আমরাও অ্যাকশনে যাব।’
বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না উল্লেখ করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগানিস্তান ও চিলির প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হল, বিদেশিরা যখন স্বদেশের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন সেই দেশের মঙ্গল হয় না। আফগানিস্তানটা দেখেন, কী কষ্টে আছে এই বিদেশিদের জ্বালায়। আপনারা জানেন যে, চিলিতে পিনোশের (চিলির স্বৈরশাসক) কি একটা পপুলার গভর্নমেন্ট ছিল, বিদেশিদের জ্বালায় সে ধ্বংস হয়ে গেল। বহু বছর ওই দেশের মানুষ আর শান্তিতে থাকতে পারে না। এই যে বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম এসব তো চিলি থেকেই বের হয়েছে।একই অবস্থা ইরানের কথা বলি না কেন। বিদেশিরা কখনো স্বদেশের মঙ্গলে কাজ করেন না। তাঁরা তাদের দেশের (কূটনীতিকদের নিজেদের দেশ) স্বার্থে কাজ করেন।তাঁরা যে সব দেশে মাতব্বরি করেছেন ওই দেশের অবস্থা কখনো ভালো হয় না।’
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখনো আমাদের দেশের অনেকেরই নিজের দেশ সম্পর্কে সম্মানবোধের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। যেখানে বিদেশি এসেছেন, সেখানেই সমস্যা হয়েছে। এ জন্য আমাদের তাঁদের থেকে দূরে থাকতে হবে। তাঁদের কোনো পরামর্শ আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তাঁরা বলতে পারেন, আমরা তা শুনতেই পারি। তবে কোড অব কনডাক্ট অনুযায়ী, তাঁরা যদি কিছু জানাতে চান, তাহলে আমাদের সরকারের কাছে জানাবেন।’
বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মিডিয়াকে আরো পরিপক্ব হতে হবে। অতীতে বিদেশিরা বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করেছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন। যাদের পছন্দ হবে, মানুষ তাদেরই ভোট দেবে। জনগণের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। কারণ, তাদের রায় কখনো ভুল হয় না।’
বিএনপির উদ্দেশে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে ধরনা না দিয়ে গ্রামে-গঞ্জে আমার দেশবাসীর কাছে যাওয়া দরকার। আমাদের বিরোধীদলগুলো বিদেশিদের কাছে না গেলে তাদেরও মঙ্গল হবে, দেশেরও মঙ্গল হবে। বিরোধী দল বলেন, সরকার বলেন, দেশটা আসলে সবার। তারাও হয়ত অনেক সময় বিদেশিদের কাছে যেতে চায় না। কিন্তু অনেক সময় পথভ্রষ্ট হয়ে তাঁদের কাছে চলে যায়।’