শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

গরু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলীর যত অপকর্ম, পদ থেকে বহিষ্কার

প্রভাতী ডেস্ক : রাজনীতির মাঠে সক্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধ জগতে জাল বিছানো শুরু করেন ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলী আক্তার। ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার পর থেকে চুরি করা গরু নিজের হেফাজতে রেখে বিক্রি, জমি দখল, ফিটিং বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের এই নেত্রী। সর্বশেষ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বহিষ্কার হয়েছেন তার পদ থেকে। একে একে তার অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সাভারের ১নং ওয়ার্ডের নয়াবাড়ির সরকারবাড়ি এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের কমিটিতে আসার পর থেকে বাবলী আক্তার হয়ে পড়েন বেপরোয়া। তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে করতেন জমি দখল। এছাড়া গরু চুরি, ফিটিং বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যক্তি জীবনে বাবলী আক্তার ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। প্রায় ১৪ বছর বয়সে তার মা মারা যান। আর গত ৭ বছর আগে তিনি নিজেই শিকার হন ব্ল্যাকমেইলের। ওই সময় কোনো ধরনের বিচার না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নেন। এরপর প্রভাবশালী নানা আওয়ামী নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে।

সাভার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মোল্লার সঙ্গেও সখ্যতা গড়ে তোলেন তিনি। পরে তার নাম ভাঙিয়ে নয়াবাড়ির সরকাবাড়ি এলাকার জালাল উদ্দীনের ৫ শতাংশ জমি দখল করে নেয় বাবলি। পরে সেখানে একটি টিনের ঘর তৈরি করে গরু রাখার স্থান হিসেবে নির্বাচন করার পর প্রায় দেড় মাস ধরে সেখানে তিনি চোরাই গরু রাখতেন। গত দেড় মাসে তিনি ২০টিরও বেশি গরু বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিন আগে তিনি এই ঘর থেকে প্রায় ৪টি চোরাই গরু ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

গরু ক্রয় করা সেই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় ১ সপ্তাহ আগে ৪টি গরু ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাবলী আক্তার। সেই গরু ৪টি আমার ভাতিজা বিকাশে টাকা ধার করে নিয়ে কিনেছিল। পরে সেগুলো বিক্রি করে ধারের টাকা পরিশোধ করে লাভের টাকা নিয়ে নেয়। তবে এগুলো চুরির গরু কীনা তা জানা ছিল না। চুরির গরু জানা থাকলে কখনই কিনতাম না।

মাংস ব্যবসায়ী খোকন বলেন, গত বুধবার ২৬ অক্টোবর ৬৪ হাজার টাকার বিনিময়ে আমিনুল ইসলাম জয়ের কাছ থেকে একটি গরু ক্রয় করি। পরে সেটি জবাই করে বিক্রি করি। এসব আগে কিছুই জানতাম না। তবে আমিনুলের ফার্ম আছে। এটি তারই গরু নাকি বাবলীর গরু এটা আমি জানতাম না।

জমি হারানো ভুক্তভোগী মাসুমা আক্তার বলেন, যে জমিতে টিনের ঘর তৈরি করে চোরাই গরু রাখা হতো, সেটি আমার দাদা জালাল উদ্দীনকে দাদি আনোয়ারা বেগম দিয়েছিলেন। ৫ শতাংশ জায়গা দাদি দাদাকে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছেন। যখনই দাদি মারা গেলেন, ঠিক তখনই বাবলী আমাদের দাদুর ওই জায়গাটুকু মানিক মোল্লার নাম ভাঙিয়ে দখল করে নেয়। সেই জমিতেই গরুর ফার্মের নামে চোরাই গরুর গোডাউন তৈরি করেন। এরকম আরও একটি জায়গা দখল করেছিল ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলী। যেটিতে তিনি ভাড়া থাকতেন।

তিনি আরও বলেন, প্রায়ই রাত তিনটা অথবা ৪টার দিকে দুই একটি করে গরু নিয়ে আসা হতো। তবে কীভাবে, কোথায় থেকে আনা হয় এসব নিয়ে কেউ ভাবেনি। এসব গরু দুই দিন কিংবা তিন দিন রেখে বিক্রি করে দিতো বাবলী। অনেক দামে এসব গরু বিক্রি হয়। প্রায় ২০টিরও বেশি গরু এখান থেকে সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যবসায়ী  বলেন, আমিও দুই একটি করে গরু কিনে এনে ব্যবসা করতাম। পুলিশ ভেবেছিল আমিও মনে হয় বাবলী আক্তারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পরে পুলিশ বুঝতে পেরে আমাকে ছেড়ে দেয়। তবে বাবলীর ঘরে তরুণ ও যুবক বয়সের লোকজন রাতে আনাগোণা করতো। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পেতো না। সেসব যুবকেরা এসে তাকে নিয়ে যেত। পরে ভোর রাতে আবার বাসায় পৌঁছে দিতো।

পার্শ্ববর্তী অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, বাবলী আক্তার আমার দোকানের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতো। কিন্তু কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করেনি আমাদের সঙ্গে। তবে ছাত্রলীগ করতো তো তাই একটু ক্ষমতা বেশি দেখাতো। নয়াবাড়ির সরকার বাড়ি এলাকা সব সময় তার আতঙ্কে থাকতো। জমি দখলের চেষ্টা করেন এমনকি দখল করেছেন। আজ শুনি তিনি গরু চুরি করে ধরা পড়েছেন।

এ ব্যাপারে সাভার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানিক মোল্লার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি। এমনকি মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার কোন উত্তর মেলেনি।

এ ব্যাপারে ধামরাই থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার বাবলী আক্তার ধামরাইয়ের ফরিঙ্গা গ্রামের বাদশা মিয়ের মেয়ে ও সাভার সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে গতকাল ২ নভেম্বর গরু চুরি মামলার সংশ্লিষ্টতা থাকায় গ্রেপ্তারের পর ছাত্রলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print