রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

ভারত থেকে খালি হাতে ফিরিনি: প্রধানমন্ত্রী

প্রভাতী ডেস্ক : চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত থেকে খালি হাতে ফেরেননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় কিছু অংশ বাদ দিলে  বাংলাদেশের প্রায় চারপাশেই ভারতের অবস্থান। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ সব বিষয়ে সহযোগিতা পেয়ে আসছে।

বুধবার(১৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনের প্রথমে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সরকারপ্রধান। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেল—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কী পেলাম, এ প্রশ্নটি খুব আপেক্ষিক।আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, এটা তার ওপর নির্ভর করছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনও রয়েছে। ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশ কী পেল- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নিয়ে আসছি। সেই লাইনটা কিন্তু ভারত নির্মাণ করে দিচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে এই তেলটা থাকবে। উত্তরবঙ্গে আর সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে তেল যেতে হবে না। রিফাইন করা তেল ওখান থেকেই আসবে। অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বে। উত্তর বঙ্গের মঙ্গা আমরা দূর করেছি।’

“পাশাপাশি ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য যেন এলএনজি পেতে পারি সেই আলোচনা হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে হয় না যে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি।”

আরেক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করেন, “আপনি সফরে যাওয়ার আগে একটি কথা বলেছিলেন যে, আপনি প্রত্যাশা করেন ভারত আরো নানা বিষয়ে উদার হবে। এই সফরে আপনার প্রত্যাশিত উদারতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? তাদের আচরণ বা কথায় সেই উদারতা পেয়েছেন কিনা? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “যথেষ্ট আন্তরিকতা আমি পেয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্যান্য যার যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের আন্তরিকতা সবসময় ছিল, আছে। আপনারা জানেন, একটা বিষয়, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দল-মত এক থাকে। এটা হল বড় কথা।”

অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে ভারতের সব দল-মত, জনগণ এক হয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। আবার আমরা যখন স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি, যখন ছিটমহল বিনিময় করি, তখন দেখেছেন, ভারতের পার্লামেন্টে যখন আইনটা পাস হয়, তখন কিন্তু সব দল এক হয়ে স্থল সীমান চুক্তি আইন তারা পাস করেছিল। বন্ধুপ্রতীম দেশ তাদের সাথে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকবে।”

তবে তিস্তা চুক্তির মত কিছু বিষয় যে আটকে আছে, সে দিকে ইংগিত করে সরকারপ্রধান বলেন, “এটা বাস্তব যে, পাশাপাশি একটি দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। আমি সবসময় মনে করি যে, সমস্যাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

“৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যে যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধের ফলে আমাদের অনেক রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ অনেক কিছু বন্ধ ছিল। আমরা একে একে সেগুলো উন্মুক্ত করে দিচ্ছি এই কারণে যে, আমাদের যেসব জেলাগুলো আছে, ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড যা আছে, আরো যাতে গতিশীল হয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তরিকতার কোনো অভাব দেখিনি। আমি যদি নিজে ভালো বন্ধু হন তবে সবাই ভালো থাকবে। আর যদি নিজে এদিক-ওদিক করেন তবে সম্পর্ক ভালো থাকে না। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়।”

ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার এ নীতিই মেনে চলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেউ বলতে পারবে না এ শত্রু ও বন্ধু, তা নয়। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করছি। বিশাল সমুদ্রসীমা… ৯৬ সালের আগেতো এ ব্যাপারে কোনো আলোচনাই হয়নি। ৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম।

“২০০১ এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলো। তারা কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমরা যখন উদ্যোগ নিলাম, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই ভারত-মিয়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে সমাধান হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি সত্য। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরেনি।”

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি কোভিড মহামারীর প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।

“সফরের পুরো সময় জুড়ে আমরা ভারতের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ও সৎ প্রতিবেশী হিসেবে সমতা এবং শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দুদেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি।

“ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদ মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।”

ভারত সফর থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়গুলোও প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন।

কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে।

চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দিতে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে।

বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা হবে।নদী দূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সল্যুশন বিনিময় করা হবে।

২০২২ সালের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে দুদেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print