রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

দেশে ২৪ ঘন্টায় করোনার রেকর্ড শনাক্ত, মৃত্যু ১১৫

প্রভাতী ডেস্ক : দেশে গত এক দিনে আরো ৮ হাজার ৮২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় আরো ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিন শতোর্ধ মানুষের মৃত্যু হলো দেশে।

এপ্রিলের রেকর্ড ভেঙে ৮ হাজার ৩৬৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত সোমবার। সেই রেকর্ড ভেঙে গেল দুই দিন আগেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ বুধবার (৩০ জুন) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪৩৬২ জন জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে সরকারের খাতায়। আগের দিন মঙ্গলবার এই সংখ্যা নয় লাখ অতিক্রম করে।

গত এক দিনে সারা দেশে যে ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩০ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম আর রাজশাহী বিভাগে মারা গেছেন ২৩ জন করে।

সব মিলিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫০৩।
গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ পেরিয়ে গেছে, আগের দিন যা ২৩. ৯৭ শতাংশ ছিল। আগের দিন দেশে ৭ হাজার ৬৬৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মৃত্যু হয়েছিল ১১২ জনের। সেই হিসেবে শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে গত এক দিনে।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরো ৪ হাজার ৫৫০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন।

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় জুনের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে।

ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৩২৫৯ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলায় ৩৯৯ জন, খুলনা জেলায় ৩৭৭ জন, টাঙ্গাইলে ৩২০ জন, যশোরে ২৮১ জন, রাজশাহী জেলায় ২৫০ জন এবং ফরিদপুরে ২১৩ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

এছাড়া কুষ্টিয়ায় ১৮৯ জন, পাবনায় ১৭৭ জন, রাজবাড়ীতে ১৬৬ জন, কুমিল্লায় ১৫৫ জন, নওগাঁয় ১৪০ জন, দিনাজপুরে জেলায় ১৩৬ জন, কক্সবাজারে ১৩৬ জন, বগুড়ায় ১২৭ জন, নোয়াখালীতে ১২৩ জন, ঝিনাইদহে ১১৫ জন এবং ময়মনসিংহে ১০৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।

তবে খুলনা বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ১৩৬৭ জন থেকে সামান্য কমে ১২৭৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০৫৯ জন থেকে কমে ৯৩৩ জন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১০১২ জন থেকে কমে ৯৫১ জন হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৬৫টি ল্যাবে ৩৫ হাজার ১০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৯২৭টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫.১৫ শতাংশ যা আগেরদিন ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩.৮২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯.৩৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১.৫৯ শতাংশ।

ঢাকা জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার আগের দিনের ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ দশমিক ১২ শতাংশ হয়েছে। আর ঢাকা বিভাগে এই হার আগের দিনের ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২২ দশমকি ৪৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ হয়েছে।
আর রাজশাহী বিভাগে ২১ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ১১ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১১ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। খুলনায় মারা যাওয়া ৩০ জনের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন, রংপুর বিভাগে ১১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন, সিলেট বিভাগে ৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

এই ১১৫ জনের মধ্যে ৫৭ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ২৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৭ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৫ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের ৭২ জন ছিলেন পুরুষ, ৪৩ জন ছিলেন নারী। ৮৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৯ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় ২৯ জুন। এই পুরো সময়ে এক দিনে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৮২২ জন নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে বুধবার।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ২৬ জুন তা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। রোববার রেকর্ড ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ১৮ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার মানুষের।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print