বাঁশখালী প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত ও অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১৭ই এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইদুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সকালে বেতন-ভাতা নিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের তর্ক হয়। এক পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তারা থানায় জানান। পুলিশ এলে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। শ্রমিকদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও সংঘর্ষে যোগ দেয়।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক মেহেদী হাসান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন-ভাতা সময় মতো না দেওয়ায় আমরা বিক্ষোভ করছি। পুলিশ এসে গুলি চালিয়েছে। পুলিশের গুলিতে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছে।’
বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের পুলিশের গুলিতে চার শ্রমিক নিহত হয়েছেন। চার পুলিশ সদস্যও গুরুতর আহত হয়েছেন।’
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বকেয়া বেতনের দাবিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এই বিষয়ে বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আজ হামলা চালিয়েছে। শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এতে ৫ শ্রমিক নিহত হয়েছে। ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে প্রায় ৫০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করে।’
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, নিহত শ্রমিকরা হলেন— তারা হলেন- চুয়াডাঙ্গার রনি, কিশোরগঞ্জের মো. রাহাত, নরসিংদীর শুভ, বাঁশখালীর মাহমুদ রেজা,
নোয়াখালীর রায়হান।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফয়সাল কবির রোজার্স বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা পেয়েছি ১৪ জনকে। এর মধ্যে একজন আছেন রায়হান নাম, আমাদের মনে হচ্ছে তিনি মারা গেছেন। বাকি যে ১৩ জন আছেন তাদের চিকিৎসা চলছে। গুলিবিদ্ধ ছাড়াও অনেক ধরনের ইনজুরি আছে।’
উল্লেখ্য, গণ্ডামারার বড়ঘোনায় চায়না সেফকো কোম্পানির উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। ৬০০ একর জমির ওপর স্থাপিত এ প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
২০১৬ সালের এপ্রিলে বিদ্যুকেন্দ্রটির ভূমি অধিগ্রহণ চলছিল। তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ছিল অসন্তোষ। তাদের অভিযোগ ছিল, পুনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হলে ইউনিয়নের লবণ ও চিংড়ি চাষে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়বেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
৪ঠা এপ্রিল স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ৬জন নিহত হয়েছিল।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.