প্রভাতী ডেস্ক : বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, সরকার দেউলিয়াত্বের শেষ পর্যায়ে এসেছে বলেই জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নিতে চাইছে। জনগণকে দেওয়ার মতো সরকারের কিছুই নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বরিশাল নগরীর জিলা স্কুল মাঠে বিএনপি’র বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার শাসন সামরিক শাসনের চেয়েও খারাপ। ১৯৭১ সালে দেশের আপামর জনগণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু, এখন দেশের কোথাও গণতন্ত্র নেই। সরকার ভোট ডাকাতি করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। বিএনপি আবারো ক্ষমতায় আসবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এজন্য ভোট ডাকাতির অবসান করতে নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার আহ্বান জানান হাফিজ।
তিনি বলেন, মেজর জিয়া ভারতে বসে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেন নাই। তিনি সম্মুখ যুদ্ধ করে খেতাব পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল, এখন আড়াই লাখ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে আওয়ামী লীগের বদৌলতে। এখন একটি কালো কোর্ট গায়ে দিলেই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়। অবসরপ্রাপ্ত এই সামরিক কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব কাদের দেওয়া হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এসময়ে।
সমাবেশে শ্লোগান দেওয়া নিয়ে স্থানীয় ছাত্রদলের দুই গ্রুপের হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা প্রসঙ্গে বিরক্তি প্রকাশ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শ্লোগান দিতে হবে রাজপথে। শ্লোগান দিয়ে সমাবেশ নষ্ট করবেন না। মিছিল করতে হয় রাজপথে মিছিল করবেন। আগুন জ্বালালে শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাবেন। মানুষের অধিকার আদায়ে নিজেদের শক্তি ব্যয়ের প্রস্তুতি নিন।
হাফিজ বলেন, ‘গত ৩টি নির্বাচনে আমি নিজেই নিজের ভোট দিতে পারিনি। সরকারের ১৬ জন সচিব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ার পরও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’
এ সমাবেশে যোগ দেন দলের প্রয়াত নেতা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির এই সদস্য তার বক্তৃতায় অভিযোগ করেন, এই সমাবেশে আসার সময় তাকে পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। ফেরি ঘাটে ফেরি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বরিশালের নেতাকর্মীদেরও বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও শত বাধা উপেক্ষা করে এই বিভাগীয় সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় দেশের মানুষ বিএনপি’র সাথে আছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের আন্দোলন বরিশাল থেকেই শুরু হয়েছে বলেন ইশরাক হোসেন।
তার সঙ্গে আসা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ও দলীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আগামীতেও সুষ্ঠু হবে না। তাই এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
সমাবেশে চট্টগ্রাম থেকে যোগ দেন ওই মহানগরীর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে পরাজিত দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। নির্বাচনের টাটকা অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইভিএম দিয়ে ভোট ডাকাতি করে তারা। এই ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সব সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তারা।
সমাবেশে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমরা রাতের ভোট চাই না। এসময় সকল নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
খুলনা সিটি করপোরেশনে পরাজিত বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ভোট ডাকাতির মডেল চালু করেছেন। ভোট ডাকাতির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রথম শিকার আমি নিজে।
মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, আবুল হোসেন খান, আক্তারুজ্জামান শামীম, এএইচএম তসলিম উদ্দিনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বিকাল ৩টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাড়াও বিভাগের ৬ জেলা থেকে নেতাকমীরা দলে দলে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। যদিও পথে পথে তাদের ওপর ক্ষমতাসীনদের হামলা এবং পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া।
সমাবেশস্থলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জিলা স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশের সাঁজোয়া যান, জলকামান এবং রেকার মোতায়েন করা ছিল। এছাড়া পুরো সমাবেশ ঘিরে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। যার প্রথমটি অনুষ্ঠিত হলো বরিশালে।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.