প্রভাতী ডেস্ক : বিএনপি ও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
শুক্রবার (১লা জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দলীয় চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতি চালু করেছে। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করে তারা ৭০ ধারা যোগ করেছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যে দল সরকার গঠন করে সেই দলের প্রধানই হন সংসদীয় দলের প্রধান এবং সরকার প্রধান। আর ৭০ ধারার কারণে কোন সংসদ সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না। তাই সরকারদলীয় প্রধান যা চান তাই সংসদে পাশ হয়। এতে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না। নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতায় দুর্নীতি বেড়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গত ৩০ বছর ধরে ৭০ ধারা অপব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ভোগ করেছে। সংসদ যেখানে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেখানে সরকারই সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করছে।’ তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুর্নীতি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির শাসনামলে দুর্নীতি ছিলোনা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ছিলোনা, ক্ষমতার অপব্যবহার ছিলোনা। গেলো ত্রিশ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে জাতীয় পার্টির শাসনামলে বেশি সুশাসন ছিলো। জাতীয় পার্টির আমলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিলো। তাই জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। যারা পার্টির অনৈক্য নিয়ে গল্প করেছেন তাদের বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করে দল দুর্বার বেগে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’
এসময় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, গেলো ১০ থেকে ১২ বছরের যে অসাধারণ উন্নয়ণ হয়েছে তার কৃতিত্ব ধরে রাখা যাবেনা যদি প্রকৃত গণতন্ত্র না থাকে। তিনি বলেন, এখন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কিন্তু জাতীয় পার্টির শাসনামলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে কোন প্রশ্ন ছিলোনা। এখন নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা, কারণ সবাই জানে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির শাসনামলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিলোনা। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উন্নয়ণের যে ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন, ’৯১ সালের পর থেকে সেই ভিত্তির ওপরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উন্নয়ণ কর্মকান্ড চালাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ২০২০ সাল শুধু করোনাকাল নয়, বাংলাদেশে ২০২০ সাল নারী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বছর। তিনি বলেন, দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো গণতন্ত্রের জন্য, বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য। উন্নয়ণ ও সুশাসনের জন্য দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে, তারা পরিবর্তন চায়। তারা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর জাতীয় পার্টির শাসনামল ফিরে পেতে চায়। তিনি বলেন, খুন, গুম, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায় আর অবিচার থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে আগামী নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সরকার গঠন করতে হবে।
এতে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.