মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

পেকুয়ায় কিশোরী গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বামী আটক !

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে এক কিশোরী গৃহবধূ সালমা বেগমকে (১৪) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামীকে পুলিশ আটক করলেও নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় জড়িত পরিবারের অন্য সদস্যরা পালিয়ে গেছে।

নিহত সালমা পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পন্ডিত পাড়া গ্রামের বাদশার মেয়ে।

স্থানীয়রা জানায়, গত তিন মাস আগে কাবিননামা ছাড়াই পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের জাফর অলমের ছেলে ও বহু মামলার আসামি বনদস্যু আলমগীরের সঙ্গে বিয়ে হয় সালমা বেগমের।

অপ্রাপ্ত বয়সী হলেও সালমার মা-বাবা টাকা ও সম্পত্তির লোভে বনদস্যু আলমগীরকে কাবিননামা ছাড়াই তাদের মেয়েকে বিয়ে দেন।

বনদস্যু আলমগীরের প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের পর থেকে আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন প্রায় সময় কারণে-অকারণে কিশোরী সালমাকে মারধর করতেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর যৌতুকের দাবিতে সকালে ও রাতে সালমাকে কয়েক দফা হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে লোহার রড ও কাঠের বাটাম দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায় আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন। নির্যাতনে সালমা অজ্ঞান হয়ে পড়লে গোপনে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় আলমগীর, জাহাঙ্গীর ও তাদের বাবা জাফর আলম। সেখানে সালমার অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক। চমেকে ভর্তির ৩ দিন পর বুধবার(২৩শে সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সালমার মৃত্যু হলে তার লাশ পুলিশ চমেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।

অপরদিকে চমেক হাসপাতাল এলাকা থেকে সালমার স্বামী ও বহু মামলার আসামি বনদস্যু আলমগীরকে আটক করেছে সিএমপির পাঁচলাইশ থানার একদল পুলিশ।

বর্তমানে বনদস্যু আলমগীর পাঁচলাইশ থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তাকে পেকুয়া থানায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।

বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত ৭/৮ বছর ধরে উপজেলার পাহাড়ি দুই ইউনিয়ন টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে স্থানীয় ডাকাত জাফর আলমের দুই ছেলে বনদস্যু খ্যাত ডাকাত জাহাঙ্গীর আলম ও আলমগীর। আলমগীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোরী মেয়েদের রাতের আঁধারে অপহরণ করে এনে তার আস্তানায় আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। কাবিননামা ছাড়াই এ পর্যন্ত প্রায় ৭/৮টি বিয়ে করেছেন আলমগীর। সর্বশেষ তার বলি হলো কিশোরী সালমা।

উল্লেখ্য, গত ২৭শে জুলাই বিকেলে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আনসার উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হামলাও চালিয়েছিলেন বনদস্যু ওই দুই সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর আলম ও আলমগীরের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।

সন্ত্রাসীরা এ সময় আনসারের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। বর্তমানে আনসার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে।

পেকুয়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই নুরুন নবী জানান, পাঁচলাইশ থানা-পুলিশ বনদস্যু আলমগীর আটক মর্মে পেকুয়া থানাকে জানানো হয়েছে। নিহত সালমার পরিবার অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানাকে অবহিত করার পর আসামিকে পেকুয়া থানায় হস্তান্তর করবে পাঁচলাইশ থানা-পুলিশ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print