বৃহস্পতিবার, ১৭ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ১৭ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ১৭ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রামে ভণ্ড কবিরাজ আটক !

এম. জিয়াউল হক : প্রতারণা করে এক নারীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে কবিরাজ হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী নামের এক ভণ্ড প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ। কবিরাজ হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউনিয়নের পাইরাং এলাকার মো. জাকির আহম্মদের ছেলে।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম নগরীর রহমান নগর আবাসিকের বাসিন্দা রোকেয়া করিমের অভিযোগের ভিত্তিতে ভুয়া কবিরাজকে আটক করে নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

জানা যায়, পারিবারিক কলহ দূর করার নামে পানি পড়া ও সুরা শেখানোর জন্য প্রথম দফায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা, দ্বিতীয় দফায় মাটির নিচে সাড়ে ৩ কোটি টাকার গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় আরো ৬৫ লাখ টাকা। এতেও চাহিদা মেটেনি, ভুয়া কবিরাজের আরো টাকা চাই। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশের কাছে ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ দিলে অবশেষে আটক হন কথিত কবিরাজ হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী।

রোকেয়া করিম জানান, ছেলের সংসার বাঁচাতে হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী নামে এক কবিরাজের কাছে যান তিনি। ‘কোরানিক চিকিৎসার মাধ্যমে ছেলে ও তার স্ত্রীর সংসারে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কবিরাজের সঙ্গে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হন। ২০ হাজার করে কয়েক দফা মিলে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে রোকেয়া করিমকে বিভিন্ন সুরা শিখিয়ে দিয়ে আমল করতে বলেন কবিরাজ। এরপর এই প্রতারক সাড়ে তিন কোটি টাকার গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি করেন। এই গুপ্তধন পেলে দু’জনের মধ্যে ভাগাভাগির কথা বলে তিনটি নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় কবিরাজ। এরপর গুপ্তধনের নাম করে তার কাছ বিভিন্ন উপায়ে মোট ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কবিরাজ।

মোট ৬৫ লাখ টাকা নেওয়ার পর মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) আরো এক লাখ টাকা দাবি করেন কথিত ওই কবিরাজ। না দিলে ভয়ভীতি দেখাতে বিভিন্ন ‘কোরানি হুমকি’ দিতে থাকে। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে পাঁচলাইশ থানায় এই ভুয়া কবিরাজের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন রোকেয়া। অভিযোগের পর ওইদিন রাতেই কথিত ওই কবিরাজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

পাঁচলাইশ থানার ওসি তদন্ত মো. শাহাদাত হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে কবিরাজ জানিয়েছে কাজের বিনিময়ে সে টাকা নিয়েছে। পারিবারিক কলহ দূর করার জন্য পানি পড়া ও তাবিজ দিয়ে সে তার পারিশ্রমিক নিয়েছে মাত্র। তবে মাঝখানে পুলিশের কারণে গুপ্তধনের পাতিল হাতছাড়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন প্রতারক লিয়াকত। গুপ্তধনের পাতিল ফেলে স্ট্যাম্পের চুক্তি অনুসারে ভাগ করা হতো বলেও জানায় সে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভুঁইয়া বলেন, ‘কবিরাজ লিয়াকত আলী একজন ভণ্ড । এক নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। ওই নারীর সংসারে অশান্তি দূর করতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ওই নারীকে গুপ্তধন পেয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আরো ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আটকের পর পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেছে। মহিলার কাছ থেকে নেওয়া ৩টি স্ট্যাম্প তার কাছ উদ্ধার করা হয়েছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘লিয়াকত আলী অন্ধ সেজে থাকলেও সে অন্ধ নয়। মানুষের সঙ্গে প্রতারণায় বেশ ধরেছে। টাকা পাওয়ার পর কবিরাজ এক নারীকে বিয়ে করে এবং নতুন বউকে ফ্ল্যাট কিনতে ৪০ লাখ টাকা দেয়। টাকা পাওয়ার পর ওই স্ত্রী ভন্ড কবিরাজকে তালাক দিয়ে চলে যায়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print