Search

শনিবার, ৯ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ৯ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ৯ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই সফর ১৪৪৭ হিজরি

করোনা টেস্টে জেকেজির প্রতারণা,দায় এড়াতে নানা ফন্দি ডা.সাবরিনার

প্রভাতী ডেস্ক : করোনা টেস্ট না করেই ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় স্বামী আরিফ চৌধুরী গ্রেফতার হলেও দায় এড়াতে নানা ফন্দি আটছেন জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা।

নিজেকে রক্ষায় প্রভাবশালী বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তিনি। চিকিৎসকদের একটি প্রভাবশালী সংগঠনের এক প্রভাবশালী নেতার বান্ধবী হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন ডা. সাবরিনা দায় থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন। তবে পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে। দোষী যেই হোক ছাড় পাবে না।

২৩শে জুন ভোরে তানজিনা নামে এক নার্স ও তার স্বামী আরিফ গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে আসে জেকেজির প্রতারণার রহস্য। ওইদিন দুপুরে জেকেজির গুলশানের অফিসে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জনকে। পরে আরিফ চৌধুরীকে ছাড়িয়ে নিতে তার ক্যাডার বাহিনী তেজগাঁও থানায় গিয়ে ভাংচুরের চেষ্টা করে। এসব ঘটনায় পুলিশ ৪টি মামলা করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনার আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপে তৈরি করা হয়। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণ মিলেছে। আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, জেকেজির ৭-৮ জন কর্মী ভুয়া ও রিপোর্ট তৈরি করেন।

জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। প্রতি রিপোর্টে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়া হতো। সেই হিসাবে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেকেজি।

পুলিশ জানিয়েছে, ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক। পাশাপাশি তিনি জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান। আর তার স্বামী আরিফ চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

জানা গেছে, স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর ডা. সাবরিনা এখন নিজেকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। জেকেজির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা নেই প্রমাণ করতে ২৪ জুন ভোর সোয়া ৫টায় নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, “অনেক আশা নিয়েই জেকেজি হেলথকেয়ার শুরু করেছিলাম বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা বড্ড কঠিন! অনেক কষ্ট করেছি! করোনা বিপর্যয় শুরু হওয়ার পর প্রথমে এলাকাভিত্তিক স্যাম্পল কালেকশন শুরু হয়- কত মানুষের কত রকম বাধা! কোনো দোকান খোলা নেই, জিনিসপত্র নেই, কেউ ভয়ে করোনা নিয়ে কাজ করতে চায় না! সব পেরিয়ে পথ চলা!!!

কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান থেকেই আমাকে সরে আসতে হয়! যারা আমাকে কাছ থেকে চেনেন তারা জানেন, আদর্শ আর ভালোবাসার কনফ্লিক্টে আমি সব সময় আদর্শকেই বেছে নিয়েছি! ৪-৬ তারিখেই স্বাস্থ্য অধিদফতর আর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ল্যাবের অধ্যাপক তুষার স্যার এবং আমার কাছে যে কয়জন সাংবাদিক ভাই ও বোনের নম্বর ছিল তাদের জানিয়ে আমি সরে যাই এখান থেকে! আমি চলে গেছি মানে এই নয় যে, এখানের কোনো সমস্যায় আমি পুলকিত হবো বা তা আমাকে ছুঁবে না! যদি কেউ দোষ করে থাকে তার প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই সাজা হবে, হওয়াই উচিত! তবে আমার প্রশ্ন হল, দু’একজন কর্মচারীর নামে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটা প্রতিষ্ঠান যে এতদিন ধরে সেবা দিয়ে গেছে সব মুহূর্তেই মিথ্যা হয়ে যাবে?

আমার বেশির ভাগ এফবি ফ্রেন্ড আমার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন, ভরসা দিয়েছেন- তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা! যারা চিরকালই আমার দোষ বের করতে পেরে বিমল আনন্দ পেয়েছেন তাদের জন্য এই পোস্ট নয়…।”

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক আরিফ জানিয়েছেন, ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান। নিজেকে রক্ষা করতে সাবরিনা এমন চতুরতার আশ্রয় নিতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ডা. সাবরিনার বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি। তার স্বামী আরিফ চৌধুরী স্বীকার করেছেন সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান। এরপরও তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সাবরিনা কেন, যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

সাবরিনার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধিদফতরের মুখপাত্র ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে তার জানা নেই।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print